গুজব-মায়া কান্না এবং লবিং তদবিরে সক্রিয় যড়যন্ত্রকারীরা
সবুজ পাতার ডেস্ক : ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে পাহাড়ের পরিস্থিতি। বিগত কয়েকদিন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে উত্তপ্ত হয়ে পড়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম। পরিস্থিতি শান্ত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সংযমের পরিচয় দিয়ে প্রশংসিত হয়েছে।
গত ৫ই আগস্টের পর থেকেই সুযোগ সন্ধানী একটি মহল পার্বত্য চট্টগ্রামকে উত্তপ্ত করার পাঁয়তারা করছিল। ১৮ সেপ্টেম্বর জেলা সদরে মামুন নামের এক যুবকের হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক দিকে মোড় নেয়। ভিডিওতে দেখা যায় ৪ থেকে ৫ জন উপজাতীয় নারী-পুরুষ মামুনকে হাত-পা বেঁধে মারধর করছে। মামুন হত্যার দিন সকালে পাহাড়ি ছাত্র সমাজের ব্যানারে পাহাড়িদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি এবং পাহাড় থেকে সেনাবাহিনী উচ্ছেদের দাবিতে বিশাল এক উগ্র বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। যার ফলে বাঙালি জন গোষ্ঠীর মনে ভীতি এবং উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর মামুন হত্যার প্রতিবাদে দীঘিনালা কলেজ শিক্ষার্থী কর্তৃক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ করার পর পাহাড়ী-বাঙ্গালী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এক পর্যায়ে লারমা স্কয়ার সংলগ্ন বাজারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই দিন রাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পানছড়ি থেকে এক উপজাতীয় গর্ভবতী মহিলাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য খাগড়াছড়ি রওয়ানা দিলে পথ আটকে দেয় উপজাতীয় লোকজন। আটকে পড়া সেনা সদস্যদের উদ্ধারে রওয়ানা হওয়া দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সেনাদলকেও আটকে রেখে গুলি বর্ষণ শুরু করে সশস্ত্র উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে ৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আহত হয় অনেকেই। পরেরদিন রাঙ্গামাটিতেও পাহাড়ী-বাঙ্গালী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভুয়া ভিডিও এবং মিথ্যা তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত করার চেষ্টা করে। অপরদিকে ২০ সেপ্টেম্বর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী শ্রীমতী সান্ত্বনা চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য ভারতের প্রধান মন্ত্রী বরাবর চিঠি প্রেরণ করে। ভারতের প্রধান মন্ত্রীকে দেওয়া চিঠির বাংলা অনুবাদ নিম্নে দেওয়া হলো:-
*********
শ্রীমতি সান্তনা চাকমা
মন্ত্রী
শিল্প ও বাণিজ্য,
জেল (হোম) এবং ওবিসি কল্যাণ বিভাগ।
ত্রিপুরা সরকার, আগরতলা।
নাম্বার. এফ.১(১৭)-মিন/আই অ্যান্ড সি/জেল(হোম)/ওবিসি/২০২৩/
তারিখ ২০.০৯.২০২৪
মাননীয় শ্রদ্ধেয় স্যার,
পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্মীয় সংখ্যালঘু আদিবাসী পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ৪০ জন নিরীহ লোককে সংগঠিত হামলা ও হত্যার ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত , ১০০ টিরও বেশি বাড়িঘর ও দোকানপাট পুড়িয়ে ফেলার ফলে ব্যাপকভাবে ফসল ও বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী।
হিন্দু, বৌদ্ধ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য নিরীহ সংখ্যালঘুদের উপর অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের এই ধরনের জঘন্য হামলার ফলে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন এবং ভয়ে অনাহারে পতিত হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত নিরপরাধ সংখ্যালঘুরা যাতে আমার শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে সেজন্য আমি আপনাকে এই বিষয়ে একটি পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করব।
উষ্ণ অভিনন্দনসহ
(শ্রীমতি সান্তনা চাকমা)
শ্রী নরেন্দ্র মোদি,
ভারতের প্রধানমন্ত্রী,
সাউথ ব্লক নিউ দিল্লি-১১০০০১।
অফিস রুম নং ৬৩০৫, ৩য় তলা, ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স, আগরতলা-৭৯৯০১০, ত্রিপুরা (W)
ফোন: (০৩৮১) ২৪১৪০৬৩ (অফ/ফ্যাক্স), (০৩৮১) ২৩৮২৫৮৪ (Res.)
ই-মেইল: santana.swse@gmail. com
(নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে সংগৃহীত চিঠি)।
*******
২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের তিন উপদেষ্টা রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় মিলিত হয়।
পার্বত্য অঞ্চল অশান্ত হয়ে উঠার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয় জানতে পারেন উপদেষ্টারা। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানানো হয় উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে। সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি স্থানীয়দেরও।
সহিংসতার পর বিভিন্ন গ্রামে পাহারাও বসিয়েছিল পাহাড়ি-বাঙালি উভয় সম্প্রদায়। সোশাল মিডিয়ায় গুজব এবং মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ফলে বাঙালিরা ভাবতো পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপগুলো সম্ভবত রাতে হামলা করতে পারে, তদ্রূপ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লোকজন ভাবতো বাঙালি সম্প্রদায় হামলা করতে পারে। এভাবে কিছু এলাকায় উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন নির্ঘুম রাত্রি যাপন করেছে, যা এখন উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে হাস্যরসের খোরাক। যারা গুজব ছড়িয়েছে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :