পাহাড়ে শান্তি সম্প্রীতি রক্ষায় জনপ্রতিনিধির বিকল্প নেই


admin প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৬, ২০২৪, ৮:২৫ অপরাহ্ন /
পাহাড়ে শান্তি সম্প্রীতি রক্ষায় জনপ্রতিনিধির  বিকল্প নেই

মো: সোহেল রানা : পাহাড়ে শান্তি সম্প্রীতি রক্ষায় জনপ্রতিনিধিদের বিকল্প নেই । পার্বত্য অঞ্চলে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে সমস্যা সমাধান করে সমুদ্র বক্ষায় কাজ করছেন । চেয়ারম্যান-মেম্বারগণ সরকারি দেওয়া বিভিন্ন নাগরিক সুযোগ-সুবিধা জনগণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউনিয়ন পর্যায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণে প্রস্তাব করা হচ্ছে এতে করে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত হবে জনগণ এমনটিই মনে করেন সুশীল সমাজ । ইতিমধ্যে যত তত্ত্বাবধায়ক ও অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অপসারণ করে নাই। সরকারের নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তেমন বিকল্প নেই বলে প্রতীয়মান হয় ।
ইউনিয়নের প্রবীণ বাসিন্দাদের ভাষ্য, স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের জনপ্রশাসনের সঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বোঝাপড়া সাবলীল বা সহজ নয় । ইউপি চেয়ারম্যানরা না থাকলে আকস্মিক ও গুরুতর কোনো ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণে কোনো অভিভাবক থাকবে না । উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা এখন আর নেই । সে ক্ষেত্রে সাধারণের মুখপাত্র হিসেবে প্রশাসন বা রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থানীয়দের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করার ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের সহায়তা শূন্যের কোটায় গিয়ে ঠেকবে, যা উদ্বেগজনক । সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের অপসারণের বিষয়টি আলোচনায় আসায় এ নিয়ে আরও বেশি উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা । তারা বলছেন, এমনটা হলে থমকে যাবে গ্রামীণ উন্নয়ন। বাড়বে সহিংসতা । আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। অনেকেই মনে করছেন, দৈনন্দিন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ অন্য যে কাজগুলো দৈনন্দিন করতে হয়, সেগুলোতে জনদুর্ভোগ ও গ্রামীণ পর্যায়ের উন্নয়ন কার্যক্রম থমকে যাবে । ‘ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশাসনের কাজের অন্যতম সহায়ক শক্তি । স্থানীয় পর্যায়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে চেয়ারম্যান মেম্বারদের। দেশের বর্তমান অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য তাদের আবশ্যকতা রয়েছে। এ মুহূর্তে তাদের অপসারণ ঘটলে স্থানীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা ঘটতে পারে।’
দীঘিনালা উপজেলার চাঙমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর পরিচালক ও জাতীয় পাঠ্য পুস্ত্ক বোর্ড বাংলাদেশ এর চাকমা ভাষায় বই লেখক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আনন্দ মোহন চাকমা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ জনপ্রতিনিধিদের অপসারণের জন্য দাবি নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলতেছে, এটা যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য এটা দুর্ভোগ হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় যে ক্ষোভের সৃষ্টির হয় তা সামাল দিতে চেয়ারম্যান মেম্বারদের ভূমিকা অতুলনীয়। পার্বত্য অঞ্চলে এই পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান মেম্বারদেরকে অপসারণ করা হলে আমরা বড় ধরনের বিপদে পড়ার সম্ভাবনা আছে। বর্তমানে চেয়ারম্যান মেম্বাররা পাহাড়ি ও বাঙালিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখতে কাজ করছে। যার কারণে আমরা শান্তির সুবাতাস দেখতেছি।
দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্চন চাকমা বলেন, ২০২২ সালে ইবিএম এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রপ্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছি। আমি বর্তমানে কর্মস্থলে ইউনিয়ন পরিষদে আছি এবং জনগণের সেবা দিতেছি । পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাজ করছে তাদেরকে স্ব:স্ব: পদে বহাল রাখার জন্য বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা কাছে আবেদন করছি।
দীঘিনালা উপজেলা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি) সাধারণ সম্পাদক মো: জয়নাল আবেদীন বলনে, আওয়ামী লীগের সরকার দলীয় প্রতীক বাদ দিয়ে কৌশলে তাদের দলীয় লোকজনকে দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়ী করেছে। জনগণ দেখেছে সুষ্ঠু সুন্দর নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। দেশে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দেশে বিভিন্ন সেক্টর সংস্কার করতে শুরু করেছে, সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদে জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করেছে, তবে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি কর্মস্থলে না থাকার কারণে জনসেবা ব্যাহত হচ্ছে। যতদ্রুত সম্ভব ইউনিয়ন পরিষদগুলোর জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে নতুন করে নির্বাচন দেওয়া দরকার।
ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আগত মো: কামাল হোসেন বলেন, পরিষদে এসে আমরা দ্রুত জন্ম সনদ, চেয়ারম্যান সনদ পাই, অনেক সময় চেয়ারম্যান মেম্বারের বাড়িতে গিয়েও সেবা ও পরামর্শ পেয়ে থাকি, সব চেয়ারম্যান ও মেম্বার এক সাথে বাতিল করে দিলে আমাদের সেবা পেতে সমস্যা হবে মনে হয়।