দীঘিনালা প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বিদ্যুৎ লো-ভোল্টেজের কারনে সংযোগ না পাওয়ার অজুহাতে এক দিনের জন্যও চালু হয়নি পানি শোধনাগার। বর্তমানে বিদ্যুৎ কোন সমস্যা নাই তবুও কোন অদৃশ্য কারনে চালু করা হচ্ছে না পানি শোধনাগারটি এমন মন্তব্য এলাকর সচেতন মহলের। নষ্ট ও চুরি হচ্ছে যন্ত্রপাতি। পানি শোধনাগারটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় এক কোটি টাকা। ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে অনেক যন্ত্রাংশ। ১৫ বছর ধরে পড়ে থাকতে থাকতে তা এখন পরিত্যক্ত।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্র জানান, ২০০৪ সালে উপজেলা সদরের পূর্ব থানাপাড়ায় আয়রনমুক্ত পানি সরবরাহের জন্য শোধনাগার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। ২০০৮ সালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এন এস ইঞ্জিনিয়ারিং নির্মাণকাজ শেষে তা অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দিয়েছিল। এতে ব্যয় হয় ৯৬ লাখ টাকা। এই শোধনাগারের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০০ গ্রাহককে পানি সরবরাহের কথা ছিল। চালু না হওয়ায় শোধনাগারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে যাচ্ছে। ২০১১ সালে প্রায় ২লাখ টাকার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চুরি হয়েছিল। শোধনাগারটি নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০০৯ সালের ১৯ মে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তিপত্র ও সনদ নেয়।
২০০৯ সালের ২১ জুন পানি শোধনাগারে বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য আবেদন করে। পিডিবির নিয়মানুযায়ী ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর ৬০ কিলোওয়াটের জন্য সোনালী ব্যাংক দীঘিনালা শাখার মাধ্যমে ৩৬ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন কারিগরি ত্রুটি দূর করার জন্য একই তারিখে ২০ হাজার ১৭২ টাকা দুটি চালানের মাধ্যমে জমাও দেয়। কিন্তু তৎকালীন সময়ে বিদ্যুতের লো ভোল্টেজ ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
দীঘিনালা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের হিসাবরক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, পানি শোধনাগারের বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য বেশ কয়েক বছর আগে উভয় পক্ষের পত্র চালাচালি হয়েছিল। এরপর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে আর কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।
উপজেলা সদরের পূর্ব থানাপাড়া এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানি শোধনাগারের চারপাশে জঙ্গল। পানি শোধনের ট্যাংকের দেয়ালে জমেছে শেওলা, ভেতরে জমেছে ময়লা-আবর্জনা। পানি সরবরাহের মোটরকক্ষে বিভিন্ন মালামাল স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এ কক্ষে তিনটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মোটর রয়েছে। পানি তোলার আরেকটি কক্ষে রয়েছে দুটি মোটর। পানি সরবরাহের পাইপগুলো মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কারিগর (মেকানিক) মংথোয়াই মারমা বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নলকূপ, পানির ট্যাংকসহ বিভিন্ন মালামাল রাখায় নিরাপত্তার জন্য আমি এখানে বসবাস করছি। এখানে আগেও একবার অনেক টাকার জিনিসপত্র চুরি হয়েছে।’ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দীঘিনালা কার্যালয়ের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, শোধনাগারটি নির্মাণের পর আর চালু করা সম্ভব হয়নি। তৎকালীন সময়ে বিদ্যুতের লো ভোল্টেজসহ বিভিন্ন সমস্যাও ছিল। বর্তমানে শোধনাগারটি এমনিতে পড়ে আছে। পানি উত্তোলনের জন্য দুটি ও পানি সরবরাহের জন্য উচ্চ ক্ষমতার তিনটি মোটর পড়ে আছে। এগুলো ঠিক আছে, নাকি অকেজো হয়ে গেছে, তা পরীক্ষা করা ছাড়া বলা যাচ্ছে না। তবে ২০০৮ সালে মোটরগুলো স্থাপনের পর এক দিনের জন্যও চালু করা হয়নি। শোধনাগারটি চালু করতে হলে বর্তমানে অনেক টাকা ব্যয় হবে।
দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মো: কাশেম বলেন, দীঘিনালার পানি শোধনাগারটি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে, সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।
উপজেলার বোয়ালখালী (সদর) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা বলেন, কোটি টাকা ব্যয়ে শোধনাগার নির্মাণ করা হলেও এলাকার মানুষ এক দিনের জন্যও শোধনাগারের পানি পান করতে পারে নি। কোটি টাকা শুধু শুধু অপচয় হয়েছে। কাদের অবহেলা বা গাফিলতিতে জনগণের করের মূল্যবান অর্থ নষ্ট হয়েছে, তা খুঁজে বের করা দরকার।
বোয়ালখালী ইউনিয়নের পূর্বথানা পাড়ার বাসিন্দা প্রমোদ মুৎসদ্দি, মো: রফিকুল ইসলাম, রিপন চাকমা ও চন্দ্র শেখর চাকমা বলেন, ২০০৯ সালে পানি শোধনাগারটি নির্মানের পর এলাকায় আইরন মুক্ত পানি সরবারহের জন পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ শেষ করে অনেক জায়গায় টিউবয়েলও বসানো হয়েছে কিন্তু শোধনাগরটি এখনো পর্যন্ত একবারের জন্য চালু করা হয় নাই। পানি শোধনাগারটি চালু করলে আমরা আইরন মুক্ত পানি ব্যবহার করতে পারব।
আপনার মতামত লিখুন :