আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ের অভয়ারণ্যটিতে রয়েছে কয়েক ডজন সিংহ ও হাতি। এতে ৫ দিন একাকী বেঁচে ছিল সাত বছর বয়সী এক শিশু। হিংস্র জীবজন্তুর এই পার্ক থেকে এত অল্প বয়সী শিশুটির অক্ষত জীবিত উদ্ধার বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। জিম্বাবুয়ের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত অভয়ারণ্যে সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটে।
জিম্বাবুয়ের ম্যাশোনাল্যান্ড পশ্চিমের পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) মুতসা মুরোম্বেদজি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, তিনোতেন্ডা পুদু নামের এক শিশু বাসা থেকে বের হয়ে হেঁটে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে ‘বিপজ্জনক’ মাতুসাডোনা গেম পার্কে ঢুকে পড়েছিল। এরপর তার বেঁচে থাকার ভাগ্যপরীক্ষা শুরু হয়েছিল।
এই নারী এমপি বলেন, ‘শিশুটি পাঁচ দিন একটি উঁচু পাথরে ঘুমিয়েছে। তার চারপাশে সিংহ ছিল, পাশ দিয়ে হেঁটে গেছে হাতি। (এ কয়দিন) সে বুনো ফল খেয়েছে।’
মাতুসাডোনা অভয়ারণ্যে প্রায় ৪০টি সিংহ রয়েছে। বেসরকারি সংগঠন আফ্রিকান পার্কসের মতে, একটা সময় পর্যন্ত আফ্রিকার মধ্যে এটিই ছিল সিংহের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অভয়ারণ্য।
জিম্বাবুয়ে পার্ক অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ ম্যানেজমেন্ট অথরিটি বিবিসির কাছে মাতুসাডোনা গেম পার্কের ঘটনার কথা নিশ্চিত করে। তবে শিশুটির বয়স আট নয়, সাত বছর বলে জানিয়েছে তারা। এমপি মুরোম্বেদজি শিশুটির বয়স আট বছর বলে জানিয়েছিল। নিজের বাসা থেকে বের হয়ে সে হেঁটে চলে গিয়েছিল ৪৯ কিলোমিটার দূরে।
অভয়ারণ্যে শিশু তিনোতেন্ডা বেঁচে থাকতে তার বনবিষয়ক জ্ঞান এবং বেঁচে থাকার দক্ষতা ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছেন মুরোম্বেদজি।
তিনোতেন্ডা বেঁচে থাকতে বুনো ফল খাওয়ার পাশাপাশি লাঠি দিয়ে শুকনা নদীগর্ভে একটি ছোট কূপও খনন করেছিল। সেখান থেকে সে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করেছে। খরাপ্রবণ অঞ্চলের মানুষকে শুকনা নদীগর্ভে কূপ খননের এই কৌশল শেখানো হয়।
নিখোঁজ হওয়ার পর তিনোতেন্ডাকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছিলেন স্থানীয় ন্যামিন্যামি সম্প্রদায়ের লোকজন। প্রতিদিনই তাঁরা ড্রাম পেটাত, যাতে শব্দ শুনে সে বাসায় ফিরে আসতে পারে; কিন্তু এতে কাজ হয়নি।
শেষ পর্যন্ত পার্কের একজন রেঞ্জার তিনোতেন্ডাকে খুঁজে পেয়েছিলেন। মুরোম্বেদজি বলেন, পঞ্চম দিন সে এক রেঞ্জারের গাড়ির শব্দ শুনে সেদিকে দৌড়ে গিয়েছিল। কিন্তু অল্পের জন্য গাড়িটি তার হাত ছাড়া হয়ে যায়।
সৌভাগ্যক্রমে রেঞ্জার একই পথে ফিরছিলেন। ফেরার সময় তিনি ‘ছোট্ট মানুষের নতুন পায়ের ছাপ’ দেখতে পান। এরপর তিনোতেন্ডাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে অনুসন্ধান চালান।
এমপি মুরোম্বেদজি বলেন, বন-বাদাড়ে পাঁচ দিন কাটানোর পর উদ্ধার হওয়ার জন্য সম্ভবত এটা তিনোতেন্ডার শেষ সুযোগ ছিল।
এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাড়া ফেলেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা এই শিশুর দুর্দান্ত মনোভাবের প্রশংসা করেছেন। একজন এক্সে লিখেছেন, ‘এটা বোঝা মানুষের সাধ্যের বাইরে।’আরেকজন লিখেছেন, ‘যখন সে স্কুলে যাবে, তখন বলার মতো একটি ভয়ানক গল্প তার ভান্ডারে জমা হয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন :