ডেস্ক রিপোর্টঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয় সমীপে
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বাজার ফান্ডের প্লট বা জায়গা তথা: ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লীজের মেয়াদ ৯৯ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা, বন্ধ রাখা ব্যাংক ঋণ পুনরায় চালু করা ও বান্দরবান সদর হাসপাতালসহ সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে নিয়মিত অভিজ্ঞ ডাক্তার রাখা এবং রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার দাবীতে-
#স্মারক_লিপি
মাননীয় উপদেষ্টা,
বান্দরবান পার্বত্য জেলার নিরীহ, নিপীড়িত, অধিকার বঞ্চিত মানুষের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমরা জানি এই জেলার উন্নয়নে আপনি অত্যন্ত আন্তরিক। আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ- বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি এই তিন পার্বত্য জেলার অবহেলিত, নির্যাতিত ও বঞ্চিত মানুষের সাংবিধানিক অধিকার, মৌলিক অধিকার সর্বোপরি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় শান্তিপূর্ণভাবে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ও বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছে।
হে জাতির বিবেক,
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের অলিখিত দ্বন্দে অকার্যকর হয়ে পড়েছে বাজারফান্ড সংস্থা। এই সংস্থার অধীনে থাকা জমি রেজিস্ট্রেশন এবং ব্যাংক ঋণ বন্ধ থাকার কারণে থমকে গেছে বান্দরবানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা। ক্ষুব্ধ বান্দরবান পার্বত্য জেলার বাজারফান্ডের হাজার হাজার বাসিন্দা। সংকট নিরসনে নেই কোন কার্যকর পদক্ষেপ। বাজার ফান্ডের জমির লীজের মেয়াদ ১০বছর থাকার কারণে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে বাজারফান্ড প্রশাসক কর্তৃক বাজারফান্ডের জায়গায় ব্যাংক ঋণের অনুমতি নিয়ে দীর্ঘদিন লোন পেয়ে আসছেন। পার্বত্য চুক্তির পরও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিলো। কিন্তু লীজের মেয়াদ ১০ বছর থাকার কারণে ২০১৯ সনের ডিসেম্বর মাসে অলিখিতভাবে বাজারফান্ডের জায়গায় ব্যাংক ঋণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন, জেলা পরিষদ আইন, বাজারফান্ড আইন ও পার্বত্য শান্তি চুক্তি এসবের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় এবং আইনগুলো সংশোধন বা বাতিল না হওয়ায় বিভিন্ন সময় সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় একেক সময়ে বিভিন্ন আইনের ভিন্নতা প্রয়োগ করেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। আইনী মারপ্যাচে বন্ধ রয়েছে বাজারফান্ডের আওতাধীন প্লট বা জায়গার ঋণ। আর এতে ক্ষতিগ্রন্থ ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাজারফান্ডের এই জটিলতায় সোনালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক সহ ১৭টি ব্যাংক নতুন ঋণ যেমন দিচ্ছেনা, তেমনি পুরাতন ঋণ নবায়নের কার্যক্রমও স্থগিত রয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছে অনেক ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে নতুন উদ্যোক্তা তৈরী করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকিং কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়ে প্রভাব পড়ছে আত্মসামাজিক উন্নয়নে। এহেন অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি শ্লথ হয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান হয়ে যাচ্ছে নিম্নমুখী। তাই এমতাবস্থায়, বাজার ফান্ড এলাকায় জায়গা বা প্লটের লীজের মেয়াদ ১০বছর থেকে ৯৯ বছরে উন্নীত করে বন্ধ রাখা ব্যাংক ঋণ পুনরায় চালু করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির ১৫০ বছর যাবৎ জমি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার ধারাবাহিকতা চলে আসলেও হঠাৎ করে ঠুনকো অজুহাতে ঋণ কার্যক্রম বন্ধ রাখাটা যেমন অযৌক্তিক তেমনি অমানবিকও। পাশাপাশি এর মাধ্যমে সরকারের এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করার সূক্ষ ষড়যন্ত্রও বটে। বাজারফান্ডের প্লট বা জায়গায় ব্যাংক ঋণ না পাওয়ার কারণে অত্রাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এতে করে আগামী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাধাগ্রস্থ হবে। কারণ স্মার্ট জনগণ তৈরী না হলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবেনা। অতএব, তিন পার্বত্য জেলার লক্ষ লক্ষ জনতার প্রাণের আকুতি, যাতে করে বাজারফান্ড এলাকায় বসবাসরত প্লট বা জায়গার মালিকগণের লীজের মেয়াদ ১০বছর থেকে ৯৯ বছরে উন্নীত করা হয় এবং বন্ধ রাখা ব্যাংক ঋণ পুনরায় পাইতে পারেন তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনে আপনার সদয় মর্জি হয়।
হে কর্মবীর,
বান্দরবান সদরের সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন উপজেলা ও দুর্গম এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত দরিদ্র রোগীরা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু যুগের পর যুগ ধরে চিকিৎসক সংকট, নানা অপরিচ্ছন্নতা ও অপব্যবস্থাপনায় জর্জরিত বান্দরবানের সদর হাসপাতাল। এছাড়া ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও কম জনবল ও চিকিৎসক সংকট নিয়েই চলছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। যার ফলে নানা ভোগান্তিতে পড়েন সেবা নিতে আসা রোগীরা। চিকিৎসক সংকটসহ অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত বান্দরবান সদর হাসপাতালসহ অন্যান্য উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো।
তথ্য মতে, বান্দরবান সদর হাসপাতালে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মধ্যে চিকিৎসক সিনিয়র কনসালটেন্ট ১২ জন থাকার কথা থাকলেও আছে ৪ জন। জুনিয়র কনসালটেন্ট ২৭ জন মধ্যে রয়েছে ৬ জন, মেডিকেল অফিসার প্রায় ৫০ জন মধ্যে ১১ জন রয়েছে। এছাড়াও মেডিকেল টেকনোলজি ২২ জন, ফার্মাসিস্ট ৩ জন, হেলথ এডুকেটর ২ জন, নার্স ৬৮ জন, ৩য় শ্রেণি ১০ জন, তাছাড়া ৪র্থ শ্রেণি ২০ জন থাকার কথা থাকলেও এসব মিলে রয়েছে মাত্র ১৫ জন। শুধু বান্দরবান সদর হাসপাতাল নয় রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি, লামা, আলীদকম, নাইক্ষ্যংছড়ি এই ৬টি উপজেলাতেও একই অবস্থা। ডাক্তার, জনবল সংকট ও অব্যবস্থাপনা রয়েছে প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য হাসপাতালে। বান্দরবান সদর হাসপাতালসহ অন্যান্য উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বেশিরভাগই নার্সিং শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। তবে নাই তাদের কোনো অভিজ্ঞতা। সিনিয়র অভিজ্ঞ নার্সরা কাজ থেকে রেহাই পেতে দেখাচ্ছেন নানা অজুহাত।
পানি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়েও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। এছাড়াও হাসপাতালের বাথরুম অপরিষ্কার ও ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে রোগীদের বাড়ছে আরো নানা রোগব্যাধি। একটা রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর অপরিচ্ছন্নতা ও নানা দুর্গন্ধে নতুন রোগ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয় রোগীদের। হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসক কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে তাদের দেখা মেলেনা। যার দরূন, দিনের পর দিন চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে ও নানা রোগে কষ্ট পাচ্ছে অত্র জনপদের হাজার হাজার ভুক্তভোগী রোগীরা। এমতাবস্থায়, বান্দরবান সদর হাসপাতালসহ অন্যান্য উপজেলা: রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো নিয়মিত অভিজ্ঞ ডাক্তার রেখে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিগত সরকারের আমলে জেলা পরিষদ কর্তৃক আত্মীয়করণ, দলীয় করণ ও ঘুষ- দূর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। জেলা এবং উপজেলা সদরে ১৫/২০ বছর যাবৎ অযোগ্য শিক্ষকরা কর্মরত থাকায় যোগ্য শিক্ষকদের শহর এলাকায় চাকরীর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। বিধায়, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করার আকুল আবেদন জানাচ্ছি। বাস্তবতার নিরীখে আবাসন বা প্রয়োজনীয় ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা হলে পার্বত্যবাসী উপকৃত হবেন। এখন থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ যোগ্যতার ভিত্তিতে স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগের নিবেদন করছি। বিগত ১৫ বছরের জেলা পরিষদের কার্যক্রমের দুর্নীতি চিহ্নিত করে একটি স্বেতপত্র প্রকাশের আহ্বান জানাচ্ছি। দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে শান্তির আওতায় আনতে না পারলে দুর্নীতি চলমান থাকবে বলে আমরা মনে করি।
হে মহান দেশপ্রেমিক,
অতএব, উল্লেখিত বিষয়ের আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত নাগরিকদের নাগরিক সেবা ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বাজার ফান্ডের প্লট বা জায়গা তথা ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লীজের মেয়াদ ৯৯বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে বন্ধ রাখা ব্যাংক ঋণ পুনরায় চালু করা ও বান্দরবান সদর হাসপাতালসহ সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে নিয়মিত অভিজ্ঞ ডাক্তার রাখা এবং রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আপনার একান্ত সদয় মর্জি হয়।
আপনার মতামত লিখুন :