মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত ইহুদিবাদী রাষ্ট্র


admin প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১, ২০২৩, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন /
মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত ইহুদিবাদী রাষ্ট্র

 

  • মুসা আল হাফিজ :

আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে হলোকাস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। এর উপর পা রেখে অস্তিত্বে এসেছে একটি রাষ্ট্র। ঐতিহাসিক রবার্ট বি গোল্ডম্যান লিখেছেন, ‘হলোকাস্ট ছাড়া ইসরাইল নামক রাষ্ট্র গঠন সম্ভবই ছিল না।’ গোল্ডম্যানের কথাটি যেভাবে ঐতিহাসিক, তেমনি ধর্মতাত্ত্বিক। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থে আছে হলোকাস্টের ধারণা। তালমুদের ভাষ্য হচ্ছে- ইহুদিরা যখন রাজ্যহারা হয়ে যাবে, তখন ৬০ লাখ ইহুদিকে আত্মবিসর্জন দিতে হবে। তারপর প্রতিষ্ঠিত হবে তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র!

নিজেদের একটি রাষ্ট্রের জন্য ৬০ লাখ প্রাণদান ইহুদিদের পক্ষে কখনো সম্ভব হয়নি, যদিও তাদের প্রয়োজন ছিল রাষ্ট্র অর্জন। কেননা, শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবত দেশে দেশে তারা উদ্বাস্তুরূপে নিগৃহীত জীবনযাপন করছিল। হিটলারের নাজিজম যখন জার্মানিতে উসকে উঠল, তখন সেখানকার ইহুদিদের পিঠটা একেবারে দেয়ালে ঠেকে যায়। পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে যেকোনো জাতির জন্যই একটা না একটা প্রতিবিধান হয়ে যায়, অনেকটা প্রাকৃতিক নিয়মেই। ইহুদিদের জন্যও হলো।

উপলক্ষ সৃষ্টি করে দিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তারা তখন চাইল হলোকাস্টের কর্তব্যটার একটা রাহা করা যায় কী-না? হলোকাস্ট কথাটার সরল তরজমা হলো আত্মবিসর্জন বা কোরবানি। আগেকার রোমান ও গ্রিকদের ধর্মীয় রীতিতে দেবতাদের খুশি রাখতে অন্ধকার রাতে কালো রঙের পশুকে পুরোটা ঝলসিয়ে দেবতুষ্টির জন্য পাহাড়ে রেখে আসা হতো। এটিকে তারা বলত holokaustos। শব্দটি গঠিত গ্রিক শব্দ holos (whole) এবং kaustos(burnt) একসাথে মিলে। এর মানে হলো- পুরোপুরি ঝলসানো উপঢৌকন। পরে ইংরেজিতে সেটি Holokaust হয়েছে। ইহুদিদের কাছে এ ছিল খুবই গুরুতর এক কাজ, যেখানে পশু নয়- হলোকাস্ট করতে হবে নিজেদের ৬০ লাখ প্রাণ! যে প্রাণদানে তাদের অনীহা ইতিহাস স্বীকৃত।

কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ইহুদি মিডিয়া প্রচার করল, হলোকাস্ট সংঘটিত হয়ে গেছে। ৬০ লাখ ইহুদি হত্যা করেছে হিটলার। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট স্টালিন, যিনি নিজে একজন ইহুদি ছিলেন, ঘোষণা দিলেন নাৎসিরা বিভিন্ন শ্রমশিবিরে ৬০ লাখ ইহুদি হত্যা করেছে। হিটলারের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ক্ষেপিয়ে তোলার মোক্ষম একটি হাতিয়ার হিসেবে এটিকে লুফে নিলো মিত্রজোট। ফ্রান্স, আমেরিকা, ব্রিটেন প্রচারে যোগ দিলো। ব্যাপারটি চাউর হয়ে গেলো গোটা বিশ্বে। তারপর বিশ্বযুদ্ধ একসময় শেষ হবে।

হলোকাস্টের জন্য জার্মানিকে দায়ী করে ইহুদিদের জন্য ছয় হাজার ৮০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। যার উপর ভর করে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদিরা রাষ্ট্র গঠন করবে। হলোকাস্ট রোধে ব্যর্থতার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ইহুদি রাষ্ট্রের অভিভাবক হয়ে যাবে। এক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই যুদ্ধপরবর্তী কয়েক দশকে ইহুদিদের তিন লাখ কোটি ডলার অর্থসাহায্য দেবে। হলোকাস্ট হয়ে উঠবে বিশ্ব রাজনীতির বাঁক বদলে বিশেষ প্রভাবক।

এর ফলে বিশ্বপরিস্থিতিতে কর্তৃত্বের লাগামটা ধীরে ধীরে ইহুদিবাদের অনুকূলে চলে যাবে। কেউ যদি এ নিয়ে সন্দেহ করে, তাহলে তাকে হিটলারের দালাল বলা হবে। সন্দেহকারী কারো কারো উপর ইহুদি জঙ্গিরা হামলা করবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে সন্দেহ পোষণের কারণে হাভার্ড ইউনিভার্সিটিতে সামনাসামনি মূর্খ বলে আখ্যায়িত করা হবে। অনুসন্ধিৎসু গবেষকদের মাথার উপর ঝুলতে থাকবে অপবাদ, একঘরে হওয়ার ভীতি এমনকি মৃত্যু-আশঙ্কার খড়গ।

কিন্তু সত্যি সত্যিই কী হলোকাস্ট ঘটেছিল? ৬০ লাখ ইহুদি নিহত হয়েছিল? হলোকাস্টের প্রবক্তারা শুধু ইহুদিদের মৃত্যুর কথা বলেই ক্ষান্ত নন; বরং তারা বলেন যে, জার্মানরা ইহুদিদের হত্যা করে মৃতদেহ দিয়ে স্যুপ তৈরি করেছিল। পোল্যান্ডের অসউইচ শ্রমশিবিরে ৪০ লাখ ইহুদিকে গ্যাসচেম্বারে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। বুচেনওয়াল্ড, বারজেন বেলসেন, মাউথাউসেন, ডাকাউ ও জার্মানির মূল ভূখণ্ডের অন্যান্য বন্দিশিবিরে হত্যা করা হয়েছিল ২০ লাখ ইহুদি। ব্যাপারটি খুবই সাঙ্ঘাতিক।

এটি যদি আংশিকও সত্য হয়, তাহলে তা অবশ্যই মর্মান্তিক। কিন্তু ইহুদিদের দেহ দিয়ে স্যুপ তৈরির বিষয়টিকে ইহুদি ঐতিহাসিকরাই মিথ্যা ও গুজব সাব্যস্ত করেছেন। আর যে অসউইচে ৪০ লাখ ইহুদি হত্যার কথা জোর দিয়ে বলা হয়, এ সম্পর্কে অসউইচ বারকেনিউ জাদুঘরের সিনিয়র কিউরেটর ও রাষ্ট্রীয় মুহাফিজখানার পরিচালক ড. ফ্রান্সিসজেক পাইপারের মন্তব্য হলো- ‘এটা একটা ডাহা প্রতারণা।’
২০০৫ সালের ২১ জানুয়ারি ভিডিওতে ধারণকৃত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর হাজার হাজার লোককে অসউইচ শ্রমশিবিরে ‘ক্রেমাওয়ান’ নামে নরহত্যার যে গ্যাসচেম্বার দেখানো হয়, সেটি নকল ও জোসেফ স্টালিনের সরাসরি নির্দেশে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।’ ইহুদি সাংবাদিক ডেভিড কোল মি. পাইপারের এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। তিনি জন্মের পর থেকে শুনে আসছিলেন ৪০ লাখ ইহুদি হত্যার কথা। এরপর একটি সরকারি রিপোর্টে পড়লেন ১১ লাখ ইহুদি হত্যার কথা। আবার লিউচটার রিপোর্টে দেখেন, গ্যাসচেম্বারে ইহুদি হত্যার কাহিনী পুরোপুরি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

আসলে যুদ্ধকালে অসউইচ নিয়ে একটি রহস্যজনক আচরণ করা হয়েছিল। সেই রহস্যটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে অসউইচে মিত্রবাহিনী তথা রুশ-মার্কিন অক্ষের কোনো হামলা না করার মধ্য দিয়ে। সেখানকার শ্রমশিবিরে বন্দী ছিল ইহুদিসহ মিত্রবাহিনীর বহু সেনা। উচিত ছিল তাদের যেকোনো উপায়ে মুক্ত করা। অসউইচে ছিল হিটলার বাহিনীর যুদ্ধসরঞ্জাম উৎপাদনের কারখানা। মিত্রবাহিনীর উচিত ছিল হামলা করে তা ধ্বংস করা। অসউইচে ছিল নাৎসি বাহিনীর ৪০টি বৃহৎ ও অত্যাধুনিক শিল্পকারখানা। অসউইচের আশপাশে ছিল উন্নতমানের সিনথেটিক রাবার ও ওষুধ নির্মাণের কারখানা। ছিল নাৎসি বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ও বিপুল অস্ত্রশস্ত্র। তার মানে জায়গাটি হিটলারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিত্রবাহিনীর সেখানে তো হামলা করারই কথা।

কিন্তু দেখা গেল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পুরো সময়ে মিত্রবাহিনী সেখানে একবারও বোমা হামলা করল না। ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান একবার সেখানে কয়েকটি বোমা ফেলেছিল। এর জন্য পরে আমেরিকা-রাশিয়া তথা মিত্রদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে বলল, এটি দুর্ঘটনাক্রমে ঘটেছে। অথচ জার্মানির প্রতিটি শহর ও লোকালয়ে শত শত মার্কিন ও ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান বৃষ্টির মতো বোমা নিক্ষেপ করেছে। বেসামরিক লোকালয়ে শত শত টন বোমা নিক্ষেপ করেছে। একটি ছোট্ট শহরও বাদ পড়েনি, অসউইচের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে জঙ্গিবিমানগুলো সেই সব গুরুত্বহীন জায়গাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলত। অসউইচকে কেন অক্ষত রাখা হলো? সে কী বিশেষ কোনো সুফল প্রসব করবে বলে আগ থেকেই কথা ছিল? কথা থাক বা নাই থাক, অসউইচে গ্যাসচেম্বারের নাম করে ঠিকই বের করে আনা হলো একটি সুফল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগে ১৮ এপ্রিল নিউইয়র্ক টাইমস কোনো সূত্র বা উৎসের উল্লেখ ছাড়াই শিরোনাম ছাপাল যে, অসউইচ শ্রমশিবিরে ৪০ লাখ ইহুদি হত্যা করা হয়েছে। ব্যাস। যুদ্ধ শেষেই বিজয়ী মিত্রশক্তি নুরেমবার্গ আদালতে দাবি তুলল, অসউইচে ৪০ লাখ ইহুদি হত্যার বিচার চাই। ক্ষতিপূরণ চাই। সোভিয়েত সরকার এ সময়ে একটি রিপোর্ট ছাপাল যে অসউইচে ইহুদি গণহত্যা হয়েছে এবং নিহতের সংখ্যা ৪০ লাখই। এরপর অনেকের কাছে এটি বেদবাক্য হয়ে গেল। সর্বত্র ধ্বনিত হতে লাগল অসউইচেই ৪০ লাখ! সব মিলিয়ে ৬০ লাখ!
কিন্তু প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে অনেকেই গবেষণা করেছেন। তাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে যে, ৬০ লাখ নয়; বরং অসউইচসহ বিভিন্ন বন্দিশিবিরে এক লাখ ৩৫ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার লোক মারা গেছে। যাদের মধ্যে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীসহ ইহুদিরাও ছিল। গ্যাস চেম্বার নয়, নয় গণহত্যা বা পরিকল্পিত নিধনও; বরং এরা মারা যায় অনাহারে, রোগ-ব্যাধিতে।

যুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসউইচসহ অন্যান্য জার্মান বন্দিশিবিরে এ ধরনের মৃত্যু অস্বাভাবিক ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ঐতিহাসিক আর্য মেয়ার হলোকাস্ট নিয়ে বই লিখেছেন। নাম দিয়েছেন- হু ভিড হেভেন্স নট ডার্কেন? মানে, স্বর্গ কেন অন্ধকার হয়নি? বইয়ে তিনি খোলাখুলিই উল্লেখ করেন, গ্যাসচেম্বারে ইহুদি হত্যার কাহিনী ঠিক নয়। অসউইচ ও অন্যান্য শ্রমশিবিরে মৃতদের অধিকাংশই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। একই কথা দেখা যায়, গ্যাসচেম্বার বিশেষজ্ঞ ফ্রেড. এ লিউচটারের রিপোর্টে। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত তার রিপোর্টে বলা হয়, অসউইচে এ যাবত গ্যাসচেম্বার হিসেবে যা প্রদর্শন করা হয়েছে, এ ধরনের গ্যাসচেম্বার কখনো সেখানে ছিল না এবং গ্যাসচেম্বার ব্যবহারের কোনো আলামতও সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করেছেন মার্কিন ঐতিহাসিক ও গবেষক রিচার্ড ই হারউড। তিনি সমকালীন বই-পুস্তক, ঐতিহাসিক প্রমাণ, পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট ও নুরেমবার্গ আদালতে প্রদত্ত সাক্ষ্য প্রভৃতির ভিত্তিতে একটি বই লিখেছেন। নাম দিয়েছেন- ‘Did six million really die’ সত্যিই কি ৬০ লাখ নিহত হয়েছিল? ১৯৯১ সালে একটি ওয়েবসাইটে (জুন্ডেলসাইট জাগ্রাম) তার বইটি প্রকাশিত হয়। দেখা যায়, তিনি উপসংহারে উপনীত হয়েছেন যে, ‘হিটলার কখনো ইহুদি হত্যার নির্দেশ দেননি এবং গ্যাসচেম্বারে ইহুদি হত্যার কাহিনী একটা আজগুবি গল্পমাত্র।’ মা যেভাবে শিশুকে গল্প শোনায়, এক যে ছিল দৈত্য। কুলার মতো কান। মুলার মতো দাঁত। সকাল-বিকাল হাজার লোকের কল্লা দিয়ে সে নাশতা করত-

বলা বাহুল্য, এই সত্য আবিষ্কারের জন্য রিচার্ড হার্ডটনসহ প্রত্যেককেই ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। ইহুদি নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া তাদের চরিত্রহনন করেছে। হলোকাস্টওয়ালারা দাবি করেন, শাওয়ার বা গোসলখানায় পানি ছাড়ার কলের ছদ্মাবরণে গ্যাসচেম্বারে ইহুদি গণহত্যা চালানো হয়। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মান বন্দিশিবিরে নাৎসিরা বন্দীদের সাথে কীরূপ আচরণ করেছে, এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে আন্তর্জাতিক রেডক্রস তিন ভলিউমের যে রিপোর্ট প্রকাশ করে, তাতে তৃতীয় ভলিউমের ৫৯৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- ‘রেডক্রস প্রতিনিধিরা শুধু কাপড়-চোপড় ধোয়ার জায়গা নয়, সব গোসলখানা ও শাওয়ার পরিদর্শন করেছে। কোথাও নোঙরা কিংবা অপরিচ্ছন্নতা দেখতে পেলে প্রতিনিধিরা সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। তারা কর্তৃপক্ষকে এগুলো অপসারণ ও মেরামতের নির্দেশ দিতেন।’ রেডক্রসের পরিদর্শক টিম প্রায়ই সেখান পরিদর্শন করত। বন্দীদের আত্মীয়স্বজনের সাথে একান্তে কথা বলত। বন্দীদের খাদ্যে ক্যালরির পরিমাণ পরীক্ষা করত। রেডক্রসের রিপোর্টে দেখা যায়, বন্দীরা যুদ্ধকালে আত্মীয়স্বজনের কাছে চিঠিপত্র দিত। বাইরে থেকেও চিঠিপত্র আসত। রেডক্রস তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় খাদ্য বিতরণ করে।

সেখানে বন্দীদের শিশু জন্মের নিবন্ধনের ব্যবস্থা ছিল। মৃত্যু নিবন্ধনের ব্যবস্থাও ছিল। কেউ অসুস্থ হলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল। রেডক্রসের রিপোর্টে জানা যায়, যুদ্ধের একপর্যায়ে বন্দিশিবিরের ইহুদি ডাক্তারদের পূর্ব-রণাঙ্গনে জ্বরের চিকিৎসায় পাঠানো হয়। সেখানে মহামারীর মতো জ্বর ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই অসউইচ ও অন্যান্য বন্দিশিবিরেও জ্বর ছড়িয়ে পড়ল। ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হয়ে গেল। মিত্রবাহিনীর অবিরাম গোলাবর্ষণে জার্মানির রেল ও পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ল। এ সময় বন্দিশিবিরে অসুখে বহু লোক মারা যায়। রেডক্রসের বক্তব্য অনুযায়ী এই হচ্ছে অসউইচ, মাউথাউসেন ও অন্যান্য শ্রমশিবিরে বন্দী মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা।

হলোকাস্টওয়ালাদের গণহত্যার প্রচারটা নিপুণভাবে গুছানো। তারা ৬০ লাখ সংখ্যাটিকে ঠিক রাখার জন্যে প্রচার করেছে যে, যাকলোন বি নামক কীটনাশক ওষুধ খাদ্যের সাথে মিশিয়ে বিভিন্ন শ্রমশিবিরে কয়েক হাজার ইহুদি হত্যা করা হয়। যুদ্ধ শেষ হলে নুরেমবার্গ আদালতে যাকলোন বি নাৎসিদের হাতে সরবরাহের অভিযোগে ড. ব্রনোটেসকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। অথচ সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে, যাকলোন বি আসলে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়; বরং উপকারী। বন্দিশিবিরে বন্দী ও কর্মচারীদের উকুনমুক্ত রাখতে, তাদের কাপড়-চোপড় ও শয্যাস্থান ধোয়া-মোছা করতে এর ব্যবহার করা হতো। অথচ ড. ব্রনোটেসকে হত্যা করা হলো নিষ্ঠুরভাবে।

কিন্তু হলোকাস্ট-বিষয়ক মিথ্যাচার এতই স্থূল যে, ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা প্রচার করলেও সেই সময় জার্মান অধিকৃত পোল্যান্ডে মোট বসবাসকারী ইহুদির সংখ্যা ৬০ লাখের অর্ধেকও ছিল না। যাদের অনেকেই আবার যুদ্ধকালে বিভিন্ন দেশে সরে গিয়েছিল। হলোকাস্টওয়ালারা বলে, অসউইচে ৪০ লাখ ও অন্যান্য বন্দিশিবিরে হত্যা করা হয়েছিল ২০ লাখ ইহুদি। অথচ ১৯৮৯ সালে অসউইচ ও অন্যান্য শ্রমশিবির সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং সার্ভিসের যে গোপন দলিলটি রেডক্রসের হাতে আসে, তাতে দেখা যায়- অসউইচে মারা যায় এক লাখ ৩৫ হাজার বন্দী। এদের মধ্যে মৃত্যুর সার্টিফিকেট আছে ৬৯ হাজার জনের। যাদের মধ্যে ইহুদির সংখ্যা মাত্র ৩০ হাজার। আর জার্মানির মূল ভূখণ্ডসহ অন্যান্য শ্রমশিবিরে মারা যায় সর্বসাকুল্যে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ লোক। কিন্তু এই মৃত্যুগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংঘটিত হয় মিত্রবাহিনীর হামলায়।

যুদ্ধের শেষ মাসগুলোতে ব্রিটিশ ও আমেরিকান বাহিনীর বোমা হামলায় পুরো জার্মানি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। জার্মানির পরিবহন, চিকিৎসা, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। পূর্বদিক থেকে সোভিয়েত বাহিনী ঘূর্ণিঝড়ের মতো ধেয়ে আসে। তাদের অভিযানে লাখ লাখ শরণার্থী জার্মানির দিকে পালিয়ে আসতে থাকে। এই পালিয়ে আসা বন্দীতেই জার্মানি নিয়ন্ত্রিত বন্দিশিবির ও শ্রমশিবিরগুলো বোঝাই হয়ে যায়। ১৯৪৫ সালের গোড়ার দিকে এসব শিবিরে বন্দীদের পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। মহামারী আকারে জ্বর, টাইফয়েড, আমাশয় ও ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। এই মানবিক দুর্যোগে যারা মারা গেল, জায়নবাদী ক্যামেরাওয়ালারা তাদের লোমহর্ষক নানা ছবি তুলে নিচে লিখলেন, এরা ইহুদি। এদের গ্যাসচেম্বারে হত্যা করা হয়েছে। সেই ছবি সারা বিশ্ব দেখেছে। এ থেকে চিত্রনাট্য হয়েছে। উপন্যাস হয়েছে। কবিতা হয়েছে। মানুষ হিটলারকে গাল পেড়েছে। ইহুদিদের পক্ষে সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।

হলোকাস্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলাকেই করা হয়েছে ঝুঁঁকিপূর্ণ। কেননা, এটি এমন এক মিথ, যাকে ধাক্কা দিলে ধাক্কা খায় ইহুদি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব। ধাক্কা খায় পশ্চিমা রাজনীতির চরিত্র ও নৈতিকতা। এই মিথের ভেতর লুকিয়ে আছে সেই প্রকল্পের স্বরূপ, যাতে ক্যামেরা, পত্রিকা, রাজনীতি, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, কূটনীতি ইত্যাদি অদৃশ্য স্বার্থের নির্দেশে চরিত্র তৈরি করে কাউকে দানব বানায় আর কাউকে মহান বানায়, উপহার দেয় রাষ্ট্র!