মানিকছড়ির অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহিদ মিনার


admin প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪, ৮:০০ অপরাহ্ন /
মানিকছড়ির অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহিদ মিনার

মানিকছড়ি সংবাদদাতা : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে পালিত হবে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দেশের প্রতিটি শহীদ মিনারের বেদিতে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ফুল হাতে ঢল নামবে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের। অথচ খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৮টি এবতেদায়ী ও দাখিল মাদরাসার একটিতেও নেই শহীদ মিনার! প্রতিষ্ঠার যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও শহীদ মিনার স্থাপনে কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি। অথচ প্রতিবছর উপজেলা পরিষদ, প্রশাসন, এলজিইডি, ইউনিয়ন পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলো শতশত কোটি টাকার বরাদ্ধের মাঝেও ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনে শহীদ মিনার স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। তাছাড়া ব্যক্তি কিংবা সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসেনি। যার ফলে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে অজানাই থেকে যাচ্ছে হাজারো শিক্ষার্থীর।
উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়িতে ৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার। তাছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ের দুটি কলেজসহ ১৪ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আরো ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর বাইরেও অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন এন্ড পাবলিক স্কুল রয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাপস কুমার চৌধুরী বলেন, মন্ত্রণালয়ের বরাদ্ধ না থাকায় সরকারি ভাবে কোনো শহীদ মিনার স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে ব্যক্তি কিংবা জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বিত্তবানদের উদ্যোগে শহীদ মিনার স্থাপন করার নীতিমালা থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক বিদ্যালয়ের তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করি সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখবে।
দক্ষিণ চেংগুছড়া নেছারিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, অর্থবরাদ্ধ না থাকায় সরকারিভাবে উপজেলার মাদরাসা গুলোতে এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়নি। তবে মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে খুব শীগ্রই শহিদ মিনার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
গচ্ছাবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা সদরের খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে এ প্রতিষ্ঠানটি হওয়া সত্বেও শহীদ মিনার স্থাপনের সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেই। এখানে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু শহীদ বেদিতে গিয়ে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানানো থেকে তারা বঞ্চিত থেকে যায় বছরের পর বছর।
উপজেলা প্রবীণ শিক্ষক মো. আতিউল ইসলাম অক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, সরকার প্রতি বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা বরাদ্ধ দিচ্ছে। অথচ যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে শহীদ মিনার স্থাপনের বিষয়টি কেন যেন আমলেই নিচ্ছে না। তাছাড়া উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে কোটি কোটি টাকার বরাদ্ধে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনে কোনো বরাদ্ধ রাখেনা। একমাত্র উদাসীনতার কারণেই হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভাষা শহীদদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানার বাইরে থেকে যাচ্ছে। যাদের রক্তের বিনিময় আমরা পেয়েছি মাতৃভাষা বাংলা, তাদের মর্যাদা দিতেই আমারা কার্পণ করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা সাদিয়া নূরায়া বলেন, প্রথমেই স্বস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয়দের বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। তাদের আন্তরিকতা থাকলে অবশ্যই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা সম্ভব হবে।