মাটিরাঙ্গায় ২৪০ হেক্টর জমিতে কাসাভা আলুর চাষ


admin প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩, ৪:৫৬ অপরাহ্ন /
মাটিরাঙ্গায় ২৪০ হেক্টর জমিতে কাসাভা আলুর চাষ

 

মো: আরিফুল ইসলাম : পাহাড়ি জনপদে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কাসাভা আলুর চাষ। কাসাভা আলু স্থানীয়ভাবে ‘ঠেংগা আলু’ বা শিমলা আলু নামে বেশ পরিচিত। ৬ থেকে ৭ ফুট উঁচু গাছের গোঁড়ায় মাটির নীচে উৎপাদিত এই আবাদে অনেকটাই খরচ কম হয়। ফলে পরিত্যক্ত জমি এবং পাহাড়ের ঢালে কাসাভা আলু (শিমলা আলু) আবাদ করা হচ্ছে। তাছাড়া বাজারেও এর চাহিদা অনেক ভালো। এ জাতীয় আলু পুষ্টি চাহিদাও মেটায়। এতে প্রচুর শর্করা রয়েছে। ঠেংগা আলু বা শিমলা আলু সিদ্ধ করে খাওয়া যায় এবং সবজি হিসেবেও রান্না করে খাওয়া যায়। এগুলো খুবই পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। ফলে পাহাড়ী জনপদের পরিত্যক্ত টিলা ভূমিতে দিন দিন কাসাভা আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে চাষীরা।

এবিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার মো সবুজ আলী বলেন, পাহাড়ের মাটিতে পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ কাসাভা চাষে রয়েছে অপার সম্ভাবনা, কাসাভাতে প্রায় ৪০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, ১-২ ভাগ প্রোটিন, ৫৫-৬০ ভাগ জলীয় উপাদান এছাড়াও রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ভিটামিন সি । অন্যান্য চাষের মতো কাঁচাভা চাষে মাটি এত উর্বর হওয়ার প্রয়োজন নেই, পাহাড়ে এবং বালি মাটিতে কাসাভা চাষ করা যায়। সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে কাসাভা ভালো হয়। কাসাভার জন্য ২৫-৩০ ডিগ্রী তাপমাত্রা উপযুক্ত তবে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচে আসলে কাসাভার বৃদ্ধি বা ফলন কমে যায়। কাসাভা সাধারণত এপ্রিল মে মাসে অর্থাৎ বর্ষার শুরুতে রোপন করতে হয়, এবং রোপন করার জন্য বীজ অথবা কাটিং প্রয়োজন হয়। ১ হেক্টর জমি চাষের জন্যে প্রায় ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার কাটিং প্রয়োজন হয়। কাসাভা চাষের জন্যে তেমন সেচের প্রয়োজন হয় না, কারন কাসাভা খরা সহনশীল। আমরা জানি যে পাহাড়ে সেচের সমস্যা আছে সেক্ষেত্রে সেচ সমস্যা থাকলেও কাসাভা কিন্তু পাহাড়ে ভালো হয়। পাশাপাশি কাসাভাতে অন্যান্য ফসলের মত সারের প্রয়োজন হয় না। তবে যদি কেউ বাণিজ্যিকভাবে করে সে ক্ষেত্রে সার পরিমাণ পরিমিত ভাবে দেয় তখন ফলন কিন্তু দ্বিগুণেরও বেশি হবে। যদি সচরাচর ফলন ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিক টন হয়, আর বাণিজ্যিকভাবে কেউ চাষ করলে ৫৫ থেকে ৬০ মেট্রিক টন হবে। সে হিসেবে মাটিরাঙ্গাতে এবছর ২৪০ হেক্টর জমিতে কাসাভা আলুর চাষ করা হয়েছে। কৃষকের ভাষ্যমতে প্রতি বিঘা জমি থেকে এবছর ৫ থেকে ৭ টন কাসাভা উৎপাদন হয়েছে। সে হিসেবে বাজার দর প্রায় ৬০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। এছাড়া কাসাভাতে তেমন আন্ত পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। যদি আমরা একটু আন্ত পরিচর্যা করি সেচ ও সুষম সার পরিমান মতো দেই তাহলে কাসাভা উৎপাদন দ্বিগুণ হবে। পাহাড়ের অনুর্বর মাটি বা অনাবাদি পতিত জমিতে যদি চাষ করা হয় তাহলে এখান থেকে অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব।
কাসাভে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্টারস। কাসাভা দিয়ে গ্লুকোজ, বালি, সুজি, কেয়ারস, কেক, পাউরুটি, চিপস ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এছাড়াও ওষুধ শিল্পে কাসাভার রয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনা। ওষুধ শিল্পে ব্যাপক ভাবে কাসাভার প্রয়োজন হয়, একারণে বিভিন্ন কোম্পানি একেবারে গ্রাম পর্যায়ে এসে কৃষকদের উৎপাদিত কাসাভা তারা বহন করে নিয়ে যাচ্ছে এবং কৃষক উৎপাদিত কাসাভা কোম্পানির কাছে পৌঁছে দিতে পারছে। তাদের পরিবহন খরচ একবারে নাই বললেই চলে। কৃষক কিন্তু এ-থেকে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কাসাভার কিন্তু বিদেশেও প্রচুর চাহিদা রয়েছে, সেক্ষেত্রে আমারা যদি দেশে উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারি তাহলে বৈদেশিক অর্থ উপার্জন করতে পারবো। আমাদের কৃষক ভাইয়েরা লাভবান হতে পারবে’’।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার পাহাড়ি জনপদের বড়নাল এলকায় শতাধিক শ্রমিক শিমলা আলু তোলা ও সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের সাথে আলাপকালে
শিমলা আলু চাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয়দের কাছ থেকে অনাবাদি ৭০০ একর জায়গা লিজ নিয়ে শিমলা আলুর চারা লাগাই। চারা গজানোর পর ৩ মাস অন্তর গোঁড়ার আগাছা পরিষ্কার করে গোঁড়ায় মাটি তুলে দিলে ফলন বৃদ্ধি পায়। প্রতি টন দশ হাজার টাকা করে প্রাণ কোম্পানী ও রহমান কেমিক্যাল কোম্পানির কাছে বিক্রি করি।
তিনি বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিমলা আলুর কোন বিকল্প নেই। আগে এর চাহিদা কম থাকলেও বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে।
আমাদের পাহাড়ি জনপদের মাটিরাঙ্গা, বেলছড়ি, আমতলী, বড়নাল, তবলছড়ি, তাইন্দং সহ বিভিন্ন এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কাসাভা আলুর চাষ।
স্থানীয়ভাবে এটি ঠেংগা আলু নামে বেশ পরিচিত। সরকার যদি শিমলা আলুর চাষে একটু নজর দেয় তাহলে চাষীরা আরো ভালো ফলন উৎপাদন করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।