বিরাট আয়োজনে বিতর্কিত রামমন্দির উদ্বোধন: ভারতকে যতটা নিকৃষ্ট হিসেবে দেখছেন নেটিজেনরা


admin প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ২৩, ২০২৪, ২:১৮ অপরাহ্ন /
বিরাট আয়োজনে বিতর্কিত রামমন্দির উদ্বোধন: ভারতকে যতটা নিকৃষ্ট হিসেবে দেখছেন নেটিজেনরা

বহু বিতর্কের পর অবশেষে ভারতের অযোধ্যায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের স্থানে বিতর্কিত রামমন্দিরের উদ্বোধন করলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একটি ঐতিহাসিক মসজিদকে ধ্বংস করে প্রকাশ্য দিবালোকে, বিরাট আয়োজনে, বিশ্বব্যাপী লাইভ সম্প্রচার করে সেখানে মন্দির উদ্বোধন করাকে নিকৃষ্টতম ভারতের জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে দেখছেন নেটিজেনরা।

কারণ মন্দিরটি যেখানে তৈরি হয়েছে, সেটা ভারতের সব থেকে বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানগুলির অন্যতম। ওখানেই একসময়ে ছিল ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি বাবরি মসজিদ।

রাম মন্দির ধ্বংস করে ওই মসজিদ গড়া হয়েছিল, এই দাবি তুলে হিন্দু জনতা ১৯৯২ সালে মসজিদটি ভেঙে দিয়েছিল। তারপরে সারা দেশে শুরু হয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, অভিযোগ তাতে মারা গিয়েছিলেন প্রায় দুই হাজার মানুষ।

সোমবার রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতি ছিলেন দেশ-বিদেশের অতিথিরা- যাদের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে শিল্পপতি, খেলা ও চিত্রজগতের তারকারাও ছিলেন।

যদিও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি অংশ এবং বিরোধী দলগুলোর নেতাদের প্রায় সবাই এই অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন এই অভিযোগ তুলে যে মোদী রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য একে ব্যবহার করছেন। ভারতে কিছুদিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, মন্দিরের নামে ভোট সংগ্রহের চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন বিজেপি।

২০১৯ সালে অযোধ্যা মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল যে, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জায়গাটি একটি ট্রাস্টকে দেওয়া যেতে পারে এবং সেখানে একটি রামমন্দির তৈরি করা যেতে পারে।

একইভাবে, উত্তরপ্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে বলা হয় যে, তাদেরকে পাঁচ একর জমি দেওয়া হবে, যেখানে তারা একটি মসজিদ তৈরি করতে পারবে।

রামমন্দিরের নির্মাণ কাজ ২০২০ সালে শুরু হয়। যদিও মসজিদের কাজ এখনো শুরু হয়নি।

শুধু বাবরি মসজিদ নয় হিন্দুত্ববাদীরা ভারতে শত শত মসজিদ ধ্বংস করেছে। সহস্রাধিক মসজিদে তালা দিয়ে নামাজ আদায় বন্ধ করেছে। হাজার হাজার মাজার ধ্বং*স করেছে এবং এখনো করছে। মুসলিম ঐতিহাসিক স্থানগুলোর নাম পরিবর্তন করে হিন্দু ঐতিহাসিক চরিত্র ও দেব-দেবতার নামে পরিবর্তন করছে, পাঠ্যপুস্তক থেকে ভারতে মুসলমানদের অবদান মুছে ফেলা হচ্ছে।

ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের স্থানে প্রকাশ্য দিবালোকে বিরাট আয়োজন করে মন্দির উদ্বোধন করার ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা। অসভ্য ও চরম সাম্প্রদায়িক এই কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছেন সচেতন মানুষেরা। বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুসলমানরা।

এনিয়ে ফেসবুকে জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, আফসোস, প্রকাশ্য দিবালোকে, মহাযজ্ঞ করে, বিশ্বব্যাপী লাইভ টেলিকাস্ট করে, আজ যখন একটি ঐতিহাসিক মসজিদকে ধ্বংস করে সেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, বিশ্ব মুসলিম তখন নীরব, নির্বিকার! জানিনা এই সাফল্য অর্জনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের কোন শাসক মোদির হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেবেন!!

ইসমাইল হোসাইন ফেসবুকে লিখেছেন, একটি মসজিদ ভেঙ্গে সেখানে মন্দির তৈরি করলো।ধিক্কার জানাই।পৃথিবীতে বর্তমানে ভারতের বিজেপি সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল যাদের কারনে ভারত উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে।মসজিদ ভাঙলেও সে মসজিদ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। এসব লোক দেখানো রাজনৈতিক ও ধর্মীয় চর্চা করে কোন লাভ নেই।

এনএম মনিরুল ইসলাম লিখেছেন, মৌলবাদী ভারতের কেউই স্পষ্ট প্রমাণ দাড় করাতে পারেনি যে ওখানে রামের মন্দির ছিলো সম্পন্ন ক্ষমতার জোরে একটা ঐতিহাসিক মসজিদ ভেঙে সেখানে মন্দির তৈরি করা হল, অথচ মসজিদ রেখেও সেখানে একটা রাম মন্দির করা যেত। আজকে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম কাজটি করতেছে ভারত সরকার। পেশির দাপট শুধুই মাটির উপরে জেনে রেখো একদিন এমন ভয়াবহ সময় আসবে সে দিন আর ক্ষমা পাবে না।

মোঃ সুমন লিখেছেন, এ সমস্ত উগ্রবাদী লোকদের কারণেই ধর্মের গ্রহণীয়তা কমে। ওখানে মন্দির আদৌও ছিলো কিনা সেটাই স্পষ্ট না একটা মসজিদকে মন্দিরের রুপ দিয়ে দিলো। আবার তারা খুঁশিতে আত্মহারা। মসজিদকে মন্দির না বানিয়ে নিজেরা একটা বানাতে পারত। তাদের মধ্যে সে লজ্জাটাও নেই।

ভারতীয় উগ্রবাদীদের বর্বর কর্মকাণ্ডের কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বেলায়েত হোসাইন লিখেছেন, গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্মীয় রাজনীতির নতুন উত্থান মি: মোদি তার অপশক্তি আশেপাশের দেশের জনগণের উপর বিভিন্ন ধরনের প্রভাব লক্ষনীয়। ৩/৪ শত বছরের পুরনো মুসলিম শাসনামলের ইতিহাস মিসগাইড করে গত ভারতীয় বউএকযুগে ভারতের বিভিন্ন এলাকার,রাস্তার নাম, স্হাপনার নাম পরিবর্তন সহ বাবরি মসজিদকেও সরানো হইছে এমনকি তাজমহলের উপর সন্দেহ করা হইতেছে সম্রাট শাহজাহান দেবোত্তর জায়গায় মমতাজ মহল তৈরি করছে। তাছাড়া আরো কিছু মসজিদের পাশে শিব মন্দিরের অস্তিত্ব অনুভব করছে। আমার মনে হয় এই ধরনের অস্তিত্বের অনুভব কোন ধর্মের, সভ্য সমাজের শান্তির বার্তা আনয়ন করে না।

মিকাইল হোসাইন লিখেছেন, পৃথিবীর প্রতিটি কোণে স্থাপিত, প্রতিটি মসজিদ, আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়। প্রতিটি মসজিদ আমাদের হৃদয়ের সুড়ঙ্গের একেকটি শিকড়। ঐতিহাসিক বাব’রি মসজিদ ভেঙ্গে তদস্থলে রা’ম ম’ন্দির স্থাপন কোনো সভ্যের কাজ হতে পারে না। এটি ভা’র’ত ও মৌ’দি সরকারের সা’ম্প্রদা’য়িক সংকীর্ণতার স্পষ্ট দৃষ্টান্ত।

মহান আল্লাহর ঘোষণা,
یُرِیْدُوْنَ لِیُطْفِئُوْا نُوْرَ اللّٰهِ بِاَفْوَاهِهِمْ وَ اللّٰهُ مُتِمُّ نُوْرِهٖ وَ لَوْ كَرِهَ الْكٰفِرُوْنَ-
এরা তাদের মুখের ফুঁ দিয়ে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়। অথচ আল্লাহর ফায়সালা হলো তিনি তার নূরকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন। কাফেররা তা যতই অপছন্দ করুক না কেন। সূরা আস-সফ, আয়াত-৮।

আল আমিনের মন্তব্য, যারা সংখ্যাধিক্যের জোরে, গায়ের জোরে মসজিদ ভেঙেছে।মসজিদের জায়গায় মন্দির তৈরি করেছে____
তারাও খুব ভালো করে জানে এই জায়গা আবার ছাড়তে হবে একদিন, এখানেই আবারও ঐতিহাসিক #বাবরি_মসজিদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে, এবং ভারতের মুসলিমরাই সেটা করবে।—গায়ের জোর, সংখ্যার জোর কয়দিন থাকবে??পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আবারও এখানেই আজানের ধ্বনি উচ্চারিত হবে ইনশাআল্লাহ।

ইনকিলাব থেকে সংগৃহীত