পাহাড়ের সুমিষ্ট কলা মিটাচ্ছে দেশের চাহিদা-সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা জরুরী


admin প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩, ৪:১৭ অপরাহ্ন /
পাহাড়ের সুমিষ্ট কলা মিটাচ্ছে দেশের চাহিদা-সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা জরুরী

 

 

আবদুল আলী, বিশেষ প্রতিনিধি :  কলা রোয়ে না কেটো পাত তাতেই কাপড় তাতেই ভাত এ প্রবাদ বক্যটি যথার্থ মনে হচ্ছে পাহাড়ে কলা চাষের বেলায়। দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে পাহাড়ের মাটিতে উৎপাদিত দেশীয় কলার। দেশের চাহিদা মিটাচ্ছে পাহাড়ের সুমিষ্ট কলা।

পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির কলা সুস্বাদু ও ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এ অঞ্চলের কলার চাহিদা প্রচুর। ফলে দিন দিন বাড়ছে কলার চাষ। সম্পৃক্ত হচ্ছে নতুন নতুন কলা চাষি। অনাবাদি জমিতে কলার বাগান করে বছর শেষে অর্থ উপার্জন করে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার মাদার মার্কেট বলে পরিচিত গুইমারা সাপ্তাহিক কলার হাট মঙ্গলবার হলেও কলা বিক্রি শুরু হয় সোমবার থেকে। এই সময়ে উপজেলার সব অঞ্চল থেকে বিভিন্ন জাতের ও আকারের কলা বাজারে নিয়ে আসেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও চাষিরা। এ অঞ্চলের কলা ফরমালিনমুক্ত ও পুষ্ট হওয়ায় সবার কাছে এটি বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া বর্তমান সরকারের সময় পরিবহন ব্যবস্থা তুলানামূলক সহজ হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায় অনায়াসেই। 

জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাহাড়ি টিলা পথ বেয়ে সুবিধাজনক বিভিন্ন পরিবহনে কলা নিয়ে আসা হয় গুইমারা কলা বাজারে। আর সেখান থেকে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কলা কিনে পণ্যবাহী ছোট ও বড় ট্রাকের মাধ্যমে চট্টগ্রাম, নোযাখালী কুমিল্লা,চাদপুর, নরসিংদী, ঢাকাসহ সারাদেশে নিয়ে যায়।

পাহাড়ে কয়েক জাতের কলার চাষ হলেও দুই জাতের কলার আধিক্য বেশি দেখা যায়। বাংলা কলা, অন্যটি চাপা কলা। যার স্থানীয় নাম চিনি চাম্পা কলা। উঁচু পাহাড়ের মাটিতে জন্মায় বলে এগুলোকে পাহাড়ি কলাও বলা হয়। এদিকে অল্প পরিমাণে আনাজি, সাগর ও এটেকলাও পাওয়া যায়। 

পুষ্টিগুণ ও জনপ্রিয়তা বেশি হওয়ায় চাপা কলার চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে বিক্রি হয় বাংলা কলা। পুরো বছর এসব কলার ফলন পাওয়া গেলেও আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসে ফলন মেলে সবচেয়ে বেশি। এ সময় পাওয়া কলাগুলো আকারেও বড় ও পুষ্ট হয়।

দেশে সম্প্রতি বিভিন্ন দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি হবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পিছিয়ে নেই কলার দামও। এবার কলার দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতিটি কলার ছড়া  চাম্পা কলার আকার ও পুষ্ট অনুসারে ৫শত  টাকা থেকে শুরু করে ৬শত টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে  বাংলা কলার দাম চড়া। দেশজুড়ে এর চাহিদা ও বেশ। প্রতিটি বাংলা কলা আকার ও পুষ্ট অনুয়ায়ী ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। তাছাড়া সাপ্তাহের সোম ও মঙ্গলবার ৮ থেকে ১০ ট্রাক কলা  দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।

কলা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়  সমতল এলাকায় উৎপাদিত কলা এবং পাহাড়ের কলার মধ্যে পার্থক্য অনেক, পাহাড়ের  কলা বিক্রি করতে সময় লাগে না। বিষমুক্ত হওয়ায় ক্রেতারা এসব কলা কিনে নেন।

প্রতি হাটের দিন ব্যবসায়ী এবং কৃষকের মধ্যে প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। এতে কৃষকরা বাজারে কলা এনে অপেক্ষা করতে হয় না। খুব সহজে ন্যায্য দামে কলা বিক্রি করতে পারেন তারা। গুইমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওনকার বিশ্বাস বলেন, পাহাড়ের মাটি কলা চাষের  উপযোগী এখানে যে কলা চাষ করা হয় তা বেশ ভালো হয়। পাহাড়ের মাটিতে এসব কলা আপনা আপনি বেড়ে উঠলেও পরিচর্যা করলে কলা চাষে কৃষকের লোকসান হয় না। কলা চাষে কৃষি বিভাগের কাছে তেমন কোন প্রণোদনা বা সহযোগীতা করার মত কিছু না থাকলেও কলা চাষে আমরা গুইমারা উপজেলার কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কৃষি বিভাগের হিসেব অনুযায়ী এ বছর গুইমারা উপজেলায় ৬২০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ করা হয়েছে।