সাধারণ

পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২১ বছর পূর্তিতে আমাদের মূল্যায়ণ ও প্রত্যাশা

মু. ইব্রাহীম মনির, কেন্দ্রীয় সভাপতি, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ :- সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা নদী মাতৃক দেশ আমাদের বাংলাদেশে। এই বাংলা মায়ের ৫০৯৩ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে এক অভিনব এবং অখ- অঞ্চল তথা পাহাড়ের রাণী খাত পার্বত্য চট্টগ্রাম। খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এই তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে বাংলা মায়ের এক-দশমাংশ এলাকা জুড়ে প্রাকৃতিক সুন্দর্যের লীলাভূমি, সুউ”চ পাহাড়, ঝর্নার কলকল ধ্বনি, চেঙ্গী, মাইনী, কাচালং, মাতামুহুরী, রাইনখিয়াং, কর্ণফুলী ও সাঙ্গু নদীর উর্বর সমভূমি, পাহাড়ী উপত্যকা, সীমাহীন বিস্তৃত নীলাকাশ, সবুজের গালিচা, বনভূমির নিস্তদ্ধতা, বিল, ঝিল, হৃদ নদীতে দেশি-বিদেশী পাখপাখালীর উপস্থিাতি, পাহাড়-বন বনানীতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর অবস্থাান পুরো পার্বত্য ভূমির পরিবেশ কে করে তুলেছে মনোমুগ্ধকর এক অনাবিল ভাল লাগায়, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, শুধুমাত্র উপলদ্ধিই করা যায়। উত্তরে খাগড়াছড়ি মাঝখানে রাঙ্গামাটি এবং দক্ষিনে বান্দরবান এই ৩টি পার্বত্য জেলার সম্বন্বয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম, এবং পশ্চিমে ভারতে ত্রিপুরা উত্তর ও পূর্বে মিজুরাম, এবং দক্ষিন মায়ানমারের আরাকান প্রদেশ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ৭/৮ লাখ বাঙালিসহ চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মুরং পাংখু, বোম ইত্যাদি ১৩টি উপজাতি মিলে সর্বমোট ১৬/১৭ লক্ষ মাত্র। কিন্তু পাহাড়ের রাণী খ্যাত পার্বত্য চট্টগ্রামের এই ভূমিতে আজ রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ১৯৭৫ সাল থেকে এ অঞ্চলে ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় চাকমা সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে দেশ বিরোধী সশস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সশস্ত্র শাখা তথা শান্তি বাহিনী এবং ইউপিডিএফ এর আক্রমণ ও নির্যাতনে এ যাবত প্রায় ৩৫,০০০ হাজার নিরীহ বাঙালি হত্যার শিকার হয়, অব্যাহত গতিতে চলছে হত্যা, খুন, গুম, অপহরণ। বন্ধ হচ্ছে না সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি । মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পার্বত্য বাঙালিদের কে জাতিগত ভাবে নির্মুল করার এবং পার্বত্যাঞ্চলকে বাঙালি শূন্য করা লক্ষেই এ সকল অপকর্ম ও মানবতা বিরোধী গণ হত্যা স্বাধীন বাংলাদেশে পরিচালনা করা হয়।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত পার্বত্য বিষয়ক জাতীয় কমিটির পক্ষে সংসদের চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং পার্বত্য জনগনের পক্ষে পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদল জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান সন্তু লারমা পার্বত্য চুক্তি সাক্ষর করেন।
এখানে বলে রাখা ভাল যে, সন্তু লারমা পার্বত্য জনগনের প্রতিনিধি সেজে তাদের পক্ষে চুক্তিতে যে সাক্ষর করেছেন তার সে পরিচয় মিথ্যা, ভিত্তিহীন। জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান সন্তু লারমা পার্বত্য চট্রগ্রামে অনুষ্ঠিত কোন প্রকার নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে তার জনপ্রিয়তা যাচাই করেননি, অর্থাৎ সে কোন নির্বাচিত জন প্রতিনিধি নয় । ৮ লক্ষ পার্বত্য বাঙালির তো নয়ই , অন্যদিেেক পার্বত্য চট্রগ্রামের ১৩ টি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠির মধ্যে শুধুমাত্র চাকমা সম্প্রদায়ভূক্ত হবার কারণে অন্য ১২টি উপজাতি গোষ্ঠীরও সে প্রতিনিধি নয়। অধিকন্তু চাকমাদের মধ্যে ইউপিডিএফ, জেএসএস (সংস্কার) ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ইত্যাদি বেশ কয়েকটি দল সন্তুলারমার নেতৃত্ব মানে না, বিধায় সন্তু লারমা চাকমা সম্প্রদায়েরও একক প্রতিনিধি নয়। নেতা হওয়া ছাড়া কোন যৌক্তিক বিচারেই সন্তু লারমা গোটা পার্বত্য চট্রগ্রামের ১৬ লক্ষ অধিবাসীর বৈধ প্রতিনিধি নয়।
তাহলে প্রশ্ন হলো কোন যৌক্তিক বিচারে সন্তু লারমাকে পার্বত্য চট্রগ্রামের প্রতিনিধি হিসেবে তার সাথে পার্বত্য চুক্তি করা হয়েছে? এবং গোটা পার্বত্য চট্রগ্রামের শাসনকর্তা হিসেবে তাকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে ? সমতল ভূমির নির্বাচিত একজন উপজেলার চেয়ারম্যানের সমকক্ষ ক্ষমতা পাওয়ার যোগ্যও সন্তু লারমা নয়। তাই তাকে কোন বিচারেই বিরাট নেতা ভাবার কোন যৌক্তিকতা নেই। সুতরাং পার্বত্য চুক্তিতে পার্বত্য চট্রগ্রামের প্রতিনিধি হিসেবে উল্লেখিত তার পরিচয় মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।

মূলত ভারতের প্রশিক্ষিত শান্তি বাহিনীর খুনি সন্তু লারমা ও উপজাতী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জেএসএস এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো পার্বত্য চট্রগ্রামে স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠা করা। পার্বত্য চট্রগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম না হলেও সেখানে বাংলাদেশ সরকারের সার্বভৌম ক্ষমতা বিলোপ করা। পার্বত্য অঞ্চল থেকে নিরীহ পাবত্য বাঙালীদেরকে অস্ত্রের মুখে উৎখাত করে পার্বত্য চট্রগ্রামকে একমাত্র উপজাতীয়দের আবাস সিএইচটি জুম্মল্যান্ড হিসেবে পরিণত করা। (চলমান…)

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।

Back to top button