প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান বর্ষবরণ উৎসব ‘বৈসাবি’ উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণাঢ্য র্যালি ও সাংস্কৃতিক ডিসপ্লে। উৎসবের মূল অংশ বিজু, সাংগ্রাই ও বৈসু নামের তিনটি উৎসবের সমন্বয়েই এই বৈসাবি উদযাপন করা হয়, যা পাহাড়ের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর কাছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক।
৯ এপ্রিল সকালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চত্বরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে র্যালির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি ২০৩ রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আমান হাসান। পরে জেলা পরিষদ থেকে র্যালি শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন ত্রিপুরা, মারমা, চাকমা ও বাঙালি তরুণ-তরুণীরা। ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে, বাদ্যযন্ত্রের তালে নেচে-গেয়ে উৎসবের রঙ ছড়িয়ে দেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, যেমন ডিজিএফআই, এনএসআই, জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, বন বিভাগ, সেনাবাহিনী ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
বৈসাবির উৎসবমালা
বৈসাবি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসবের সম্মিলন।
চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিজু নামে তিনদিনব্যাপী এ উৎসব পালন করে। মূল দিনে রান্না হয় বিশেষ খাবার ‘পাজন’, যাতে থাকে পঁইত্রিশ রকমের সবজি।
মারমা সম্প্রদায়ের উৎসব ‘সাংগ্রাই’ তিনদিনব্যাপী পালিত হয়। বুদ্ধ পূজা, বিহার পরিষ্কার, ধর্মীয় দান, এবং জলকেলীর মাধ্যমে তারা নতুন বছরকে বরণ করে।
ত্রিপুরা সম্প্রদায় তাদের উৎসব ‘বৈসু’ পালন করে তিন দিন ধরে। ফুল সংগ্রহ, বাড়ি সাজানো, পবিত্র স্থানে ফুল নিবেদন ও ধর্মীয় রীতির মাধ্যমে তারা উৎসব উদযাপন করে।
ঐতিহ্যবাহী খাবার ও সংস্কৃতির প্রদর্শনী
বৈসাবিতে পাহাড়ের ঘরে ঘরে তৈরি হয় জনপ্রিয় সবজি মিশ্রিত খাবার ‘গণত্মক’ বা ‘পাচন’। এছাড়াও রান্না হয় পিঠা, সেমাই, ও বিভিন্ন মুখরোচক খাবার। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত নারী-পুরুষ র্যালিতে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরেন।
মারমাদের জলকেলি উৎসব
এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হলো মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি বা পানি উৎসব।
১৩ এপ্রিল খাগড়াছড়ির পানখাইয়া পাড়ায়
১৪ এপ্রিল মারমা ঐক্য পরিষদের আয়োজনে টিটিসি সংলগ্ন মাঠে
১৫ এপ্রিল বান্দরবানে বোমাং রাজার মাঠে
১৬ এপ্রিল রাঙামাটির বাঙ্গালহালিয়ায় আয়োজন করা হবে জলকেলি।
এ সময় তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন। এই পানি ছিটানোর রীতির মাধ্যমে পুরনো দুঃখ, কষ্ট ও পাপকে ধুয়ে ফেলার প্রতীকী বার্তা দেওয়া হয়। কেউ কেউ এই রীতির মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করেন ভালোবাসাও।
শান্তি, সম্প্রীতি ও উৎসবের বার্তা
বৈসাবি কেবল বর্ষবরণ নয়—এটি পার্বত্য অঞ্চলের জনগণের শান্তি, সম্প্রীতি এবং সৌহার্দ্যের উৎসব। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়সহ অন্যান্যরা এই উৎসবের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধতার বার্তা দেন, যা পাহাড় ও সমতলের মাঝে মেলবন্ধন ঘটায়।
আপনার মতামত লিখুন :