আদিবাসী স্বীকৃতির দাবী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়ষন্ত্র-সংবাদ সম্মেলনে পিসিএনপি চেয়ারম্যান


admin প্রকাশের সময় : আগস্ট ৮, ২০২৩, ৯:৪১ অপরাহ্ন /
আদিবাসী স্বীকৃতির দাবী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়ষন্ত্র-সংবাদ সম্মেলনে পিসিএনপি চেয়ারম্যান

মো. নিজাম উদ্দিন :
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতীয়দের আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র এ অভিযোগ তুলে খাগড়াছড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি)।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান।
তিনি বলেন, ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস এ দিনটি আসলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আদিবাসীর মত এদেশের ক্ষুদ্র- নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি জাতিসত্বা নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য ডামাডোল পিটিয়ে নিজেদের সরব উপস্থিতি জানান দেয় আর তথাকথিত গণমাধ্যমগুলো তা সরগরম করে প্রচার করে। আদিবাসী দিবসকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু  সুশীল, বুদ্ধিজীবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পত্রপত্রিকার সম্পাদকরা টিভির টকশো ও সভা-সেমিনারে সংবিধান বিরোধী আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করে এদেশের উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে এনজিও, দাতাসংস্থা, খ্রিস্টান মিশনারী ও পশ্চিমা দাতাসংস্থার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার পায়তারা চালান।

হঠাৎ কেন আদিবাসী শব্দ ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, এর যৌক্তিকতা কী এবং এর অন্তরালে কী আছে? এবিষয়ে তিনি বলেন, ২০০৭ সালের জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের অনুচ্ছেদগুলো কেবল আদিবাসীদের জন্য প্রযোজ্য। আর এমন লোভনীয় অনুচ্ছেদগুলোর সুবিধা নিতেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো নিজেদের আদিবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারী ও বৈদেশিক কিছু এনজিও এবং মিশনারীদের খপ্পরে পড়েই আদিবাসী স্বীকৃতি দাবি করে। ১৯৯৭ সনে পার্বত্য চুক্তি করেছে উপজাতি হিসেবে। সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে উপজাতি কোটায়, দাবি করে নিজেদেরকে আদিবাসী! এমন দাবি হাস্যকর!
২০০৭ সালের জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য অনেকগুলো অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আর এসব অধিকারগুলোর সুবিধা নিতে তারা উপজাতীয় লেবাস পাল্টিয়ে আদিবাসী লেবাস লাগাতে চাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ২০০৭ সালের পর থেকে এই দাবীর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের কুচক্রী মহল একাট্টা! কারন এ অঞ্চলকে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করলে ১. তাদের থাকবে নিজস্ব আইন পরিষদ। ২. তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্র কোন আইন করতে পারবে না। ৩. তারা চাইলে নিজস্ব সরকার গঠন করতে পারবে। ৪. যে কোন বিদেশি রাষ্ট্র তাদের কারিগরি সহায়তা দিতে পারবে। ৫. বাংলাদেশের প্রচলিত ভূমি আইন তারা মানতে বাধ্য নয়। ৬. তাদের অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্র সেখানে কোন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে না। ৭. সেখানের প্রাকৃতিক সম্পদ রাষ্ট্র নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে না। ৮. দেশের কোন নাগরিক সেখানে জমি ক্রয় করতে পারবে না!
উক্ত আইন সমূহ যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে পারে তাহলে বাংলাদেশ এক দশমাংশ হারাবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতা খর্ব হবে, সার্বভৌমত্ব হারাবে বাংলাদেশ। উপজাতি কুচক্রি মহলের স্বপ্নের জুম্মলেন্ড বাস্তবায়ন তরান্বিত হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের চেয়ে অধিক উপজাতি জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে ভারত, মায়ানমার ও চীনে। তারা কি উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে? নিঃসন্দেহে তারা উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি৷ সুতরাং বাংলাদেশে আদিবাসী স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। জাতিসংঘ বাংলাদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠী আছে কিনা তা জানতে চেয়ে ২০০৭ সালে বাংলাদেশের কাছে চিঠি দেন। চিঠির জবাবে ২০০৭ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাস্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশে আদিবাসী নেই বলে ব্রিফিং করে জানায়। এছাড়াও বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নাই, আদিবাসী  থাকলে আমি বাংলাদেশের আদিবাসী। উপজাতি ইতিহাসবিদরা অকপটে তা স্বীকার করে উপজাতীয়দের এদেশে বসবাসের ইতিহাস ৩ শত বছরের বেশি নয়। তারা পার্শ্ববর্তী দেশগুলো হইতে ১৭০০ সাল নাগাদ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করে। এই শরণার্থীরা কিভাবে আদিবাসী হয় এবং আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি তোলে? বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাঙ্গালী এদেশে হাজার বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছে। বাঙ্গালীরাই এদেশের ভূমিপুত্র। জাতিসংঘের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর যে, সংজ্ঞা রয়েছে সে সংজ্ঞা অনুসারে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জাতিস্বত্বা কোনভাবেই আদিবাসী হওয়ার দাবি রাখেনা।  ILO Convention এর সাধারণ নীতির ১ এর যে ২টি আইন আছে সেই আইনের আংশিক আমাদের দেশের উপজাতিরা তুলে ধরে। সম্পূর্ণ তুলে ধরেনা। তা কৌশলে এড়িয়ে যায়। দুইটি আইনে উপজাতি ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংজ্ঞা নির্ধারণ বিষয়ক। মূলত, আন্তর্জাতিক আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর জাতিস্বত্বার একটি অংশ আজ নিজেদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবি তুলছে এবং তাদের এই দাবির পেছনে কলকাঠি নাড়াচ্ছে বর্ণিত মহল।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শেখ শামছুর রহমান স্বাক্ষরিত স্মারক  নং-১৫.০০.০০০০.০২৪.১৮.১৪.৫৯৬ মূলে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার না করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও অনেকে তা লঙ্ঘন করে চলেছেন। দুঃখজনক যে, প্রজ্ঞাপন ও সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছে, বাংলাদেশর তথাকথিত আদিবাসী ফোরাম এবং তথাকথিত গণমাধ্যম! তারা হরহামেশাই আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করে রাষ্ট্রের সঙ্গে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে আসছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা প্রশাসন ও সরকারের নিকট দাবি জানাই সংবিধান পরিপন্থী আদিবাসী শব্দ বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
এছাড়া তিনি আরো বলেন, ৯ আগস্ট  সংবিধান পরিপন্থী, বিতর্কিত স্পর্শকাতর আদিবাসী দিবস পালনের নামে দেশবিরোধী চক্রান্তের প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের ব্যনারে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের অঙ্গ সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির উদ্যোগেও মানববন্ধন করা হবে।
প্রশাসন ও সরকারের নিকট আমাদের বার্তা হচ্ছে, আদিবাসী শব্দটি স্পর্শকাতর এবং সংবিধান পরিপন্থী; দেশপ্রেমিক জনতা হিসেবে এই শব্দ বন্ধে এবং দিবসটি পালনের উপর সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে পিসিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব আলমগীর কবির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মজিদ, কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ লোকমান হোসাইন, পিসিএনপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য সচিব মো মাসুম রানা, পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদ উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাৎ হোসেন কায়েশ, খাগড়াছড়ি জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি হাসিনা আক্তার, খাগড়াছড়ি জেলা পিসিএনপি’র সভাপতি সুমন আহমেদ সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।