২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যে কারণে তারেক রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত

নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহ একটি দিনের নাম ‘২১ আগস্ট। এইদিন জেগে আছে বাংলাদেশের মানুষের মনে দগদগে ক্ষতের মতো একটি চক্রান্তের ইতিহাস হয়ে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের নব্য-জনক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র ও বর্তমানে লন্ডনে পলাতক বিএনপি নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে আওয়ামী লীগ নিধনে নেমেছিল একদল হিংস্র মতবাদের মানুষরূপী পিশাচ। যার কারণে তারেক রহমানের সর্বো”চ শাস্তি চাচ্ছেন এ দেশের সাধারণ মানুষ।
এছাড়া ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির মৃত্যুদ- দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ৷
নানা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মূলত ৬ কারণে তারেক রহমানের সর্বো”চ শাস্তি দাবি করা যায়। তা হচ্ছে :
১ : হাওয়া ভাবনে বৈঠক : ২১ আগস্টের এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিলো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। আর এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের মূল ষড়যন্ত্রকারী তারেক রহমান ২০০৪ সালের ১৪ই আগস্ট এ বিষয়ে সর্ব প্রথম হাওয়া ভবনে বৈঠক বসেন। বৈঠকে তারেক রহমানের সঙ্গে আরো উপস্থিাত ছিলেন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর নূর, জামায়াতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান মুজাহিদ, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান ও তাজউদ্দীন।
২ : তারেকের ইন্ধনে লুৎফুজ্জামান বাবর ব্যবহার করেছিলো বিপথগামী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে : সে সময়ে কিছু বিপথগামী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে শেখ হাসিনাকে হত্যা করায় উপযুক্ত সাহায্য করবে বলে নিশ্চয়তা দেন। অতঃপর ১৮ আগস্ট আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় বৈঠকে বসেন পিন্টু ও তার ভাই তাজউদ্দীন, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ডিউক। এসময় হরকাতুল জিহাদের কাছে ১২টি আর্জেস গ্রেনেড হস্তান্তর করে বাবর।
এরপর ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় হরকাতুল জিহাদ গ্রেনেড হামলা ঘটায়। মুহুর্তেই আওয়ামী লীগের ২৬ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে পুলিশের সহায়তায় পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।
হামলার মূল হোতা তাজউদ্দীনকে গোয়েন্দা সংস্থাার সহায়তায় পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয় তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ডিউক। এভাবেই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান।
৩ : মুফতি হান্নানের জবানবন্দি : মূল হামলাকারী মুফতি হান্নান তার জবানবন্দিতে এই হামলার পেছনে তারেক রহমানের সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। বিএনপি নেতা তারেক রহমানের একসময়ের রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনসহ ৮টি স্থাানে ২১ আগস্টের ভয়াবহ সেই গ্রেনেড হামলার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা করা হয়। মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিতে এর সহস্রাধিক প্রমাণ পেশ করা হয়েছে।
মূল হামলাকারী মুফতি হান্নান সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেছেন, বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সরাসরি মদদে রাজধানীর বনানীর হাওয়া ভবন, জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নানের বাড্ডার বাসা, আসামি আহসানউল্লাহ কাজলের মেরুল বাড্ডার ভাড়া বাসা, মিরপুরের মসজিদ-ই আকবর, আসামি সুমনের মোহাম্মদপুরের বাসা, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডির সরকারি বাসাসহ ৮টি স্থাানে বৈঠক করে হামলার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেয়।
৪ : তারেক রহমান ইজ দ্যা আর্কিটেকচার অব দিস কেস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার বৈঠকে তারেক রহমান আসামিদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আর্থিক ও প্রশাসনিক সহায়তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। আসামি মুফতি হান্নানের জবানবন্দি ও সাক্ষ্যতে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
জবানবন্দি অনুসারে জানা যায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হলেন তারেক রহমান। তার নির্দেশে গ্রেনেড হামলা হয়েছে। হি ইজ দ্যা আর্কিটেকচার অব দিস কেস। তিনি সব আসামিদের সকল প্রকার প্রশাসনিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ হামলার পরিকল্পনায় তারেক রহমান ছিলেন গডফাদার। তার নির্দেশনায় এবং প্রশাসনিক সহায়তায় এই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল।
৫ : পাকিস্তানারের স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যেই এ গ্রেনেড হামলা : মূলত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতেই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করা হয়। পাকিস্তান থেকে গ্রেনেড, অর্থ ও প্রশিক্ষিত লোক আনা হয়। তারা এ দেশে এসে হাওয়া ভবনসহ বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করেন। যেহেতু তারেক রহমানের সাথে ওই প্রশিক্ষিত লোকদের সুসম্পর্ক ছিল, তাই তাদের সাথে একত্রিত হয়ে আমাদের দেশের কয়েকজন মিলে ওই জঙ্গি হামলা চালায়। এ হামলার সাথে হরকাতুল জিহাদ, লস্কর-ই তৈয়েবাসহ একাধিক জঙ্গি সংগঠন জড়িত। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পারলে পাকিস্তানের ইচ্ছায় একটি নৈরাজ্যকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আজীবন ক্ষমতায় থাকার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল।
৬ : ব্যবহার করা হয়েছিলো অত্যাধুনিক অস্ত্র : তদন্ত সূত্র বলছে, তারেক রহমানের নির্দেশে ২১ আগস্ট হামলায় যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল তা সাধারণত যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যা ইতিহাসে নজিরবিহীন।
অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ফাঁসি হয়েছে। মামলার আরেক আসামি মুফতি হান্নানের ফাঁসি হয়েছে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায়। অভিযুক্তদের মধ্যে ১৯ জন পলাতক, ৮ জন জামিনে এবং বাকিরা বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর কারাগারে রয়েছেন, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু বিচারাধীন অবস্থাায় কারাগারে মারা গেছেন। আর মূলহোতা তারেক রহমান লন্ডনে পলাতক অবস্থাায় রয়েছেন।
পৃথিবীর অনেক দেশেই রাজনৈতিক দাঙ্গা বা গোলমাল হয়ে থাকে। কিন্তু ২১ আগস্টের হামলা সাধারণ ঘটনার সাথে তুলনা করা যায় না। এই হামলায় আর্জেস গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছিল। এভাবে নিরস্ত্র জনগণের ওপর হামলা ইতিহাসে বিরল। ৭৫ সালের পর বাংলাদেশকে আবারো পিছিয়ে দিতে এবং একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে বিদেশি আগ্রাসী রাষ্ট্রের সহায়তায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটেপুটে খাওয়ার জন্যই তারেক রহমান এই হামলা বাস্তবায়ন করেন বলেও জানা যায়। যার কারণে এ মামলায় তারেক রহমানের সর্বো”চ শাস্তি বর্তমানে সময়ের দাবি।