সাধারণ

হেডম্যান প্রথা বাতিল এবং ভারতীয় ও মায়ানমারের নাগরিকদের পার্বত্য এলাকায় পূর্নবাসন ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সাংবাদ সম্মেলন

 

সবুজ পাতা ডেস্ক : ১৯০০ সালে প্রণীত বৃটিশ আইন দ্বারা পরিচালিত হেডম্যান প্রথা বাতিল এবং ভারতীয় ও মিয়ানমারের নাগরিকদের উদ্বাস্ত সাজিয়ে পূর্ণবাসন ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য অধিকার ফোরাম এবং বৃহত্তর পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ। ৭ অক্টোবর রবিবার দীঘিনালা উপজেলার হোটেল ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ এর দীঘিনালা উপজেলা কমিটির সভাপতি মো. আল আমিন। প্রধান অতিথি ছিলেন খাগড়াছড়ি পৌর কাউন্সিলর ও পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক এসএম মাসুম রানা।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, জেলা কমিটির আহবায়ক মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। এসময় অন্যদের মধ্য উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ এর উপজেলা তত্ত্বাবধায়ক মো. সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক মো, মুনসুর আলম হিরা প্রমূখ। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন, খাগড়াছড়ি পৌরসভার কাউন্সিলর এসএম মাসুম রানা।
বক্তারা বলেন, সংবিধানে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমান সুযোগ সুবিধার কথা থাকলে পার্বত্য চট্ট্রগামে সম্পূর্ন আংসাবিধানিক ভাবে ইংরেজ বেনিয়াদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রণীত প্রথা তে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হচ্ছে্ । যার কোন সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও বৈধতা নাই। বাংলাদেশের এক দশমাংশ এলাকা জুড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল হলেও দেশের অন্যান্য অংশের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও এখানকার মানুষেরা সবসময়ই অবহেলিত। অথচ বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলন হতে শুরু করে ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলন,পাকিস্তান শাসকদের শোষন-বঞ্চনা হতে মুক্তিকামী জনতার আন্দোলন ও দেশের অন্যান্য অংশের ন্যায় পার্বত্য বাঙালিদের রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে সুদীর্ঘ অবদান। পার্বত্য এলাকার জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি বাঙালি। সেই ব্রিটিশ উপনিবেশিক কাল হতে এই অঞ্চলকে নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র দানা বেঁধেছে। অদ্যবধি সকল সম্প্রদায়ের বসবাসের উপযোগী হিসেবে কোন আইন বা নীতি বাস্তবায়ন না করে বার বার এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে সৃষ্টি করা হয়েছে বিভেদ। একদিকে বিট্রিশ আমল হতে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত এই বিশাল এলাকায় কোন পরিকল্পনা না থাকলেও কিছু দীর্ঘমেয়াদী জটিল সমীকরন তৈরি করে গেছেন।যার ধারাবাহিকতায় বর্তমান স্বাধীন দেশের শাসন আমলেও পার্বত্য এলাকা নিয়ে কোন স্থায়ী নীতি বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কোন সুস্পষ্ট স্থায়ী নীতি না থাকার কারনে পার্বত্য এলাকা যার যেমন ই”ছা সেভাবে পরিচালনা করেছেন। বহি:শক্তির ইন্ধনে গর্জে ওঠেছে কিছু উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি। এই সকল উগ্রসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিগন তাদের সাম্্রাজ্যবাদী আগ্রাসন টিকিয়ে রাখতে পরিচালনা করছে পাহাড়ে সশস্ত্র কার্যক্রম। লিপ্ত রয়েছে দেশ বিরোধী প্রচারণায়। বিট্রিশ আমলের ১৪০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর পার্বত্য এলাকায় বিট্রিশদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তৈরি করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি-১৯০০। এই অনুসারে সমতল হতে বিট্রিশ বিরোধি আন্দোলন যাতে এই অঞ্চলে আসতে না পারে, একানকার বাঙালিরাও যাতে অংশ গ্রহন করতে না পারে এবং তাদের কর সঠিক ভাবে আদায় করতে একজন সুপারিন্টেন্ড বা জেলা প্রশাসকের অধীনে তাদের আজ্ঞাবহ কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকদের চীফ, হেডম্যান ও কার্বারী হিসেবে নিয়োগ দেন। বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলন রুখতেই ১৯০০ সালের বিধি অনুসারে পার্বত্য এলাকার বসবাসকারী সকল মানুষ ও বহিরাগতদের প্রবেশ ও যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।বিট্রিশদের সা¤্রাজ্যবাদী স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশে ১৯০০ সালের শাসনবিধিকে ১৯২০,১৯২৫,১৯২৯,১৯৩৩,১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বিট্রিশের সুবিধামত ধারা ও বিধির সংশোধন করেন। ১৯২৯ সালের সংশোধনীতে পার্বত্য এলাকাকে পশ্চাশপদ অঞ্চল ঘোষনা করা হলেও এর উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। পার্বত্য এলাকায় সমতলের বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় ও সীমান্তবর্তী অঞ্চল হিসেবে নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য ১৯০০ সালে বিধি প্রণয়ন করে বাঙালিদের পার্বত্য এলাকায় যাতায়াত সীমিত করা হলেও বিট্রিশ আমলের শুরুতে বাঙালির আগমন কে উৎসাহ যোগাত। ১৮৯০ সালে যে ৩০০০ তিন হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছিল তার অর্ধেকের বেশি জমির মালিক ছিল চট্টগ্রামী বাঙালি।

এখন পাহাড় থেকে বাঙালিদের তাড়ানোর জন্য নতুন কৌশল অবলম্বল করা হচ্ছে। এই মূহুর্তে হেডম্যান কার্বারী গন বাঙ্গালীদের কোন প্রকার খাজনা নিচ্ছেনা। এবং বাঙালিদের হেডম্যান রিপোর্টের নামে প্রতিমূহুর্তে হয়রানী করা হচ্ছে। কোন বাঙালিকে হেডম্যান রিপোর্ট প্রদান করা হচ্ছেনা। এছাড়া প্রথাগত ভূমি অধিকার অনুসারে হেডম্যান যাকে সার্টিফাই করবে, সে ব্যক্তিই ভূমির মালিক ও উত্তরাধিকারপ্রাপ্ত হবে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিদিন ৫৬ হাজার বাঙালি পরিবারের জায়গা জমি হেডম্যান রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে উপজাতিদের নামে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী ২০০১ সালে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করা হয়েছিল শুধু ১২,২২২ টি ভারত প্রত্যাগত উপজাতি স্বরণার্থী পরিবারের সমস্যা সমাধানের জন্য- কিন্তু দেখা গেল উপজাতীয় নেতাদের চেষ্টায় কৌশলে ২২,০০০ উপজাতীয়কে বাংলাদেশে শরনার্থী বানিয়ে পূনর্বাসন করা হয়েছে । অন্যদিকে ৫৬ হাজার আভ্যন্তরীন বাঙালি উদ্ভা¯‘কে এখন পর্যন্ত পূনর্বাসনের উদ্দ্যোগ গ্রহণ হয়নি। আবার ২০১৬ সালে সম্পূর্ন অসাংবিধানিক ভাবে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কে সংশোন করে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে সৃষ্টি করা হয়েছে বিভাজন ও সংঘাত মূলক পরি¯ি’তি।

হেডম্যন রিপোর্টের জোরেই পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের সংখ্যা বাড়াতে ভারত ও মায়ানমার নাগরিকদের রাতের আধারে সীমানা পার করে উদ্ভা¯‘ হিসেবে সাজানোর ষড়যন্ত্র চলমান। সর্বশেষ ২১ টি পরিবারকে খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালায় জামতলীতে পূনর্বাসন করা হয়। কিন্তু সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন বর্তমান জেএসএসের হত্যা নির্যাতনে উদ্ভা¯‘ ২৬ হাজার বাঙালি পরিবারকে এখন পর্যন্ত পূনবার্সনের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২২,২২২ টি উপজাতীয় পরিবারকে পূনর্বানের পর উপজাতীয়- ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী, আভ্যন্তরীন উপজাতীয় কোন উদ্ভাস্ত ছিলোনা। তাহলে চুক্তি বাস্তবায়ন কারী বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের টানা ২ মেয়াদ সহ গত দীর্ঘ ১৬ বছরের মধ্যে এমন আজব ৮২ হাজার উদ্ভাস্তের খরব সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের কেউই জানতেন না। তাহলে হঠাৎ করে উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ কোথা হতে নতুন করে এই ৮২ হাজার পরিবার বা ৪০০০০০ চার লক্ষের বেশি উদ্ভাস্ত আবিস্কার করলেন? তারা এত দিন কোথায় ছিলেন? এখন তারা কোথায় আছেন? তালিকায় স্থান পাওয়া ২১ হাজার ৯০০ পরিবার সহ ৮২ হাজার পরিবারের সদস্যরা কারা তার বিস্তারিত প্রকাশ করার আহবান জানা”িছ। আমরা মনে করছি পার্বত্য চট্টগ্রাম কে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের কাঙ্খিত জুম্মল্যান্ড বানাতে গোপনে মায়ানমার ও ভারত থেকে উপজাতীয় পরিবারকে রাতের আধারে সীমানা পার করে আভ্যন্তরীন উদ্ভাস্ত সাজানো হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে রক্ষায় সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো সহ তালিকা টি বাতিল করে যাচাই বাচাইয়ের মাধ্যমে ২৬ হাজার বাঙালি পরিবার কে পূনর্বানের উদ্যোগ গ্রহন করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আহবান জানাই।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।

Back to top button