সাধারণ

সরকারের উন্নয়নযাত্রা: সমুদ্র বন্দর

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বিশ্বের অন্যতম আলোচিত বিষয়গুলোর একটি। এই বিস্ময়কর জিডিপি প্রবৃদ্ধির পেছনে সমুদ্র বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। এদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসারে অন্যতম ভূমিকা পালন করছে এই সমুদ্র বন্দর। বর্তমান সরকার প্রবৃদ্ধি অর্জনের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচী। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমুদ্র বন্দর উন্নয়নে ৩০ বছর ব্যাপী মহাপরিকল্পনা।

সমুদ্র বন্দরের এই গতি ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বন্দরের সর্বস্তরে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে, সংস্কার করা হয়েছে পুরোনো বন্দর আইনের। বন্দরকে গতিশীল করার জন্য সরকারের গ্রহণ করা বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এগুলো হল- ভি টি এম আই এসের মাধ্যমে কর্ণফুলী চ্যানেলে জাহাজের চলাচল ও সার্বক্ষণিক তদারকি নিশ্চিত করা, বন্দরের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনা, ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে নতুন ইয়ার্ড নির্মাণ। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের গ্রহণ করা এ সকল দূরদর্শী পদক্ষেপের ফল স্বরূপ মাত্র নয় বছরে ২৮ ধাপ উন্নীত হয়ে বিশ্বের ১০০টি প্রধান বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থাান হয়েছে ৭০তম। ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক বন্দরগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হয়।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর: বাংলাদেশের প্রধান বন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং এর পরিমাণ বাৎসরিক ১২-১৪% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং ২০১৪ সালে ১৭ লাখ, ২০১৫ সালে ২০ লাখ, ২০১৬ সালে ২৩ লাখ এবং ২০১৭ সালে ২৬ লাখে উন্নীত হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর।

বন্দরের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার কর্ণফুলী কন্টেইনার টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। স্বয়ংক্রিয় কন্টেইনার অপারেশন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সি টি এম এস এবং বন্দরে নিরাপদে জাহাজ যাতায়াত ও বহির্নোঙ্গরে অবস্থাানকালে জাহাজসমূহকে সার্বক্ষনিক মনিটরিং করার জন্য আধুনিক ভি টি এম আই এস চালু করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সামগ্রিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে এ বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

মংলা বন্দর: মংলা বন্দরের কন্টেইনার পরিবহন গত কয়েক বছর ধরে অর্ধ লক্ষের মধ্যেই উঠানামা করছে। তবে মংলা বন্দরকে আরও শক্তিশালী করতে সুন্দরবনের আকরাম পয়েন্টে ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তাছাড়া কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এর পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য জুলফিকার চ্যানেলের আউটার বার ড্রেজিংসহ দুটি অতিরিক্ত জেটি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

পায়রা বন্দর: পদ্মা সেতুর সাথেই পায়রা বন্দর পুরোপুরি চালুর লক্ষ্যে ২০১৬ সাল হতে বন্দর নির্মাণ কাজ দ্রুততার সাথে এগিয়ে চলছে। এ বন্দর চালু হলে দেশের অভ্যন্তরীণ আমদানী-রপ্তানি দ্রুত বৃদ্ধি ও সাথে সাথে প্রতিবেশি ভারত, নেপাল ও ভুটান এ বন্দর ব্যবহারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে। পায়রা বন্দরের কাজ ২০১৯ সালের মধ্যে সমাপ্ত হবে বলে আশা করা যায়।

মাতারবাড়ী বন্দর: আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়ীতে সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে বলে আশা করা যায়। উক্ত প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক অবস্থাায় ২টি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। উক্ত টার্মিনাল দুটিতে প্রায় ১৫ মিটার ড্রাফট সম্বলিত ৩৫০ মিটারের জাহাজ ভিড়তে পারবে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বাড়তি চাপ অনেকাংশে কমে যাবে। যে সব মাদার ভ্যাসেল বন্দরের জেটিতে আসতে পারে না সেসব বড় আকারের জাহাজসমূহ উক্ত বন্দরে ভিড়তে পারবে।

বাংলাদেশের জিডিপিতে যেমন চট্টগ্রামের সিংহভাগ অবদান রয়েছে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে ঠিক তেমন অবদান দক্ষিণের জেলাগুলি থেকেও পাওয়া যাবে। পায়রা বন্দর ওই অঞ্চলের পর্যটন বিপ্লব আনতে সক্ষম হবে। সব মিলিয়ে পায়রা বন্দর সরকারের অন্যতম একটা মাইলফলক প্রকল্প। এটা এমন একটা সিদ্ধান্ত যা অর্থনীতির এশিয় বাঘ হতে বাংলাদেশকে সব থেকে বেশি সাহায্য করবে।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button