মহালছড়ির ভোটের রাজনীতির মাঠে ফুরফুরে মেজাজে বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ূন. বিপাকে জেএসএস

মহালছড়ি প্রতিনিধিঃ খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে আসন্ন ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে (২য় পর্যায়) চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী থেকে আওয়ামীলীগ এর বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মোটর সাইকেল প্রতিক নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন মু্িক্তযোদ্ধা এ কে এম হুমায়ূন কবির। ভোটের হিসাব নিকাশে দেখা যায় এ কে এম হুমায়ূন কবিরের নিজ সম্প্রদায়ের দিক থেকে রয়েছে এক বিশাল ভোট ব্যাংক। এসব ভোটের হিসাবের যোগ-বিয়োগ নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারের জল্পনা কল্পনায় মহালছড়ির ভোটের রাজনীতির মাঠ এখন খুব সরগরম। প্রথম দিকে জেএসএস (এমএন লারমা) সমর্থিত (বর্তমান চেয়ারম্যান) বিমল কান্তি চাকমাকে মহালছড়ি আওয়ামীলীগ কৌশলগত কারণে মৌন সমর্থন দেওয়াতে একটু শংকিত হলেও বর্তমানে জেএসএস এর মধ্যে আরো একজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় সে ভয় এখন আর নেই বলে মনে করছেন তিনি। অন্যদিকে ক্যাজাই মারমা’কে আওয়ামীলীগ মনোনীত করলেও কৌশলগত কারণে আওয়ামীলীগ এর ভোট বড় একটা অংশ জেএসএস দিকে চলে গেলে শুধুমাত্র মারমা সম্প্রদায়ের ভোটে জয়ের মূখ দেখা কঠিন হয়ে পড়বে। অন্যদিকে মহালছড়ি এলাকায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করলেও নিজেদের দলের ভিতরে একজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বেকায়দায় পড়েছে মহালছড়ির জেএসএস (এমএন লারমা) । যদিও বর্তমান চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা একদিকে জেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতা হিসেবে যথেষ্ট সুনাম আর অন্যদিকে ব্যক্তি হিসেবেও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। এদিক থেকে তিনি জেএসএস এর একক প্রার্থী হলে বিজয়ের সম্ভাবনা শতভাগ। কিন্তু এখন নিজেদের দল জেএসএস এর কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক (বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান) কাকলী খীসা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় বিমল কান্তি চাকমাকে জয়ী করে নিয়ে আসার পথ অনেকটা জেএসএস’র জন্য কন্টকাকীর্ণ হয়ে পড়েছে। আর একদিকে মহালছড়িতে বর্তমানে প্রসিত পš’ী ইউপিডিএফ এর প্রকাশ্যে কোন কার্যক্রম তেমন দেখা না গেলেও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে সুকুমার চাকমাকে সমর্থন দিয়েছে ইউপিডিএফ। প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণা করতে না পারলে ইউপিডিএফ সমর্থিত সুকুমার চাকমার বিজয়ের সম্ভাবনা খুবই কম । এসব কারণে একমাত্র বাঙ্গালী প্রতিদ্বন্ধি মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম হুমায়ুন কবির এর মেজাজ ফুরফুরে থাকাটা স্বাভাবিক। এলাকার বিভিন্ন মহলের ভোটারের আলোচনা পর্যালোচনা থেকে এসব উঠে এসেছে। তবুও প্রার্থীরা যার যার অবস্থাান থেকে সকল প্রকার কৌশল অবলম্বন করে জয়ের জন্য আশাবাদী।
জেএসএস (এমএন লারমা) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বিমল কান্তি চাকমা বলেন, জনসংহতি সমিতিতে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের কথা বাদই দিলাম, উপজেলা চেয়ারম্যানের পদে থেকে বিগত ৫টি বছর সবাইকে উপকার করতে না পারলেও কারোর কোন ক্ষতি হতে দিইনি। আমার দৃঢ় বিশ^াস মহালছড়ি উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ ‘কাপ পিরিচ’ মার্কায় ভোট দিয়ে আরেকবার চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে নির্বাচিত করবেন।
আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ক্যাজাই মারমা বলেন, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানে দেশের সর্বত্র উন্নয়নের ফলে যে অগ্রগতি হয়েছে তা সাধারণ মানুষ বুঝতে সক্ষম হয়েছে। ফলে, আমি নিশ্চিত যে, সাধারণ জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান পদে জয়যুক্ত করে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার সুযোগ দিবেন।
জেএসএস (এমএন লারমা) এর বিদ্রোহী ও মহালছড়ি উপজেলার একমাত্র নারী চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী (বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান) মিজ কাকলী খীসা বলেন, বিগত সময়ে দু’দুইবার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে থেকে সাধারণ জনগণের সাথে যে পারস্পারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা থেকে জয় শতভাগ নিশ্চিত। যদিও ভাইস চেয়ারম্যান পদে থেকে ইচ্ছা থাকা সত্বেও তেমন কারোর উপকার করা সম্ভব হয়নি। তাই মহালছড়িবাসীর সেবা করার লক্ষে এবারে চেয়ারম্যান পদে ‘আনারস’ প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছি। মহালছড়ির সর্বস্তরের জনগণ যোগ্য প্রার্থী যাচাই বাছাই করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
এদিকে প্রসিত পš’ী ইউপিডিএফ সমর্থিত সুকুমার চাকমা বলেন, স্থাানীয় ব্যক্তি হিসেবে ও সাবেক ইউপি সদস্য হিসেবে আমার সর্বসাধারণের সাথে যে পরিচিতি আছে সুষ্ঠ নির্বাচন হলে বিজয় সুনিশ্চিত।
উল্লেখ্য, আগামী ১৮ মার্চ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন আওয়ামীলীগ, জেএসএস (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ এর সমথর্িীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীসহ ৫ জন। মহালছড়ি উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৩১ হাজার ৮ শত ৯৩ ভোট। পুরুষ ভোটার ১৬ হাজার ৪শত ৬৮ জন, মহিলা ভোটার ১৫ হাজার ৪শত ২৫ জন।