সাধারণ
বান্দরবানে দুর্গম পাহাড়ে বন বিভাগের সৃজিত বনায়ন

বান্দরবান প্রতিনিধিঃ পার্বত্য জেলার দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীরা আদিকাল থেকে জুমচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। ঐ জুম পাহাড়ের সৃজিত গাছগুলোকে কেটে পুড়িয়ে দেয়ার ফলে পুরো পাহাড় ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে যেকোন সময় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশ বির্পযের আশংকা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া একই জায়গায় বার বার জুম চাষ করার ফলে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।
এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই হারিয়ে যাবে এখানকার জীবন্ত-বৈচিত্র্য। এসব দুর্গম পাহাড়ে নানা দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার কাজ করছে বনবিভাগ। সেই দুর্গম জুম পাহাড়ে উৎপাদিত ফসলি বাগানে সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করে বনায়ন সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করেন বনবিভাগ। ওই জুম পাহাড়ে বিশাল এলাকাজুড়ে সরকারের নির্দেশনানুসারে বাগান সংরক্ষণের উদ্যােগ নিয়েছেন কাপ্তাই বনবিভাগ।
বনবিভাগ সূত্রের মতে, বান্দরবান রোয়াংছড়ি উপজেলার ৩৩৪নং আলেক্ষ্যং মৌজায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কাপ্তাই ডিভিশন অধীনের বাঘমারা রেঞ্জ ও লেরাঘাউ রেঞ্জ কর্তৃক ৫৫.০ হেক্টর জমিতে পাল্পউড বাগানের কাজ চলছে। উক্ত বন বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রজাতির গামারী, একাশিয়া, হাইব্রিড, মিনজিরি গাছ ৬-৬ দূরত্ব রেখে ৩-৪ লম্বা সারিতে চারা রোপণ করে একটি বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে।
৩৪৩নং আলেক্ষ্যং মৌজায় সৃজিত ১১০ হেক্টর বাগান সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দুর্গম সীমান্তে ঘেষা জুম পাহাড়ে জুমিয়ারা তাদের উৎপাদিত ধান, তিল, কাউন, মারফা বিভিন্ন ফসল ঘরে তুলছে। ওই জুম বাগানে সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় রোপনকৃত চারাগুলো গজিয়ে উঠেছে। জুম চাষের উৎপাদিত ফসলের যাতে ক্ষতি না হয় বন বিভাগের কর্মকর্তারা সেদিকটাও দেখাশোনা করছেন।
কয়েকজন জুমচাষীরা বলেন, জুম চাষ দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীদের একটি আদি পেশা। প্রতি বছরের ন্যায় এই বছর যেমন জুম চাষ করছেন তেমনি আগামীতেও এই পেশায় লিপ্ত হবেন। তবে সরকারিভাবে জুম পাহাড়ে গাছ উজাড়কৃত জায়গা বনায়ন করার উদ্যােগকে তারা সাধুবাদ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বাঘমারা রেঞ্জ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, পরিবেশ উন্নয়ন ও পাল্পউড উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় গাছ রোপণ করেছি। উক্ত বাগানটিতে জুম চাষের কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না হলে ভবিষ্যতে পর্যাপ্ত পরিমাণের পাল্পউড বাগান সৃজিত হবে।
তিনি আরো বলেন, জুম চাষের প্রবণতা বন্ধ করতে না পারলে অথবা জুম চাষীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সৃষ্টি না হলে বন, বাগান, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের বিপর্যয় হতে পারে।