সাধারণ

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের “পরিচালনা বোডর্” এর ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের ২য় সভা অনুষ্ঠিত

আশেক উল্লাহ: পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ‘পরিচালনা বোর্ড’ এর ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের ২য় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় খাগড়াছড়ি ইউনিট কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন বোর্ডের মাননীয় চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা। সভার আলোচ্য বিষয় ছিল (১) গত ২৫/০৮/২০২১খ্রি. তারিখে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভার কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন এবং গৃহীত সিদ্ধান্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা (২) ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহের নভেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত সময়ের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং (৩) বিবিধ।
নিখিল কুমার চাকমা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের “পরিচালনা বোর্ড” এর ২০২১-২০২২ অর্থবছরে অনুষ্ঠিত ২য় সভা। তিনি বক্তব্যের শুরুতে পার্বত্য চট্টগাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিনিধি, তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক, বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীগণ ও বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকগণসহ উপস্থিত সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
সভাপতির অনুমতিক্রমে সদস্য প্রশাসন ইফতেখার আহমেদ (যুগ্মসচিব) বিগত পরিচালনা বোর্ড সভার কার্যবিবরণী পাঠ করেন এবং গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিস্তারিত উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীগণ কোড নং ২২০০১১০০, ২২০০০৯০০ এর আওতাধীন প্রকল্প/স্কিম এবং পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত বোর্ডের আওতাধীন প্রকল্পসমূহের প্রকল্প পরিচালকগণ নভেম্বর, ২০২১খ্রি. পর্যন্ত সময়ের সার্বিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিবরণ তুলে ধরেন।
এছাড়া সভায় রিজার্ভ বাজার হতে জুগুলুক্যা পাহাড়/পুরানবস্তি সেতুর নাম পরিবর্তন করে “বীর মুক্তিযোদ্ধ মোজাফফর আহমদ তালুকদার সেতু” এবং আসামবস্তি হতে ব্রাক্ষনটিলা সেতুর নাম পরিবর্তন করে “বীর মুক্তিযোদ্ধা লাল বাহাদুর ছেত্রী সেতু” নামে নামকরণের প্রশাসনিকভাবে অনুমোদিত বিষয়টি আলোচনা হয়। রাঙ্গামাটি শৈল বিপনী বিতানের ভাড়া আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট দোকানদারদেরকে পত্র প্রেরণ এবং বকেয়া ভাড়া আদায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড তহবিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, উঁচুভূমি বন্দোবস্তীকরণ প্রকল্প, তিন পার্বত্য জেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ঘরে ঘরে সোলার বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন (বিনামূল্যে সোলার বিতরণ), পর্যটন শিল্প বিকাশে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন ভিউ পয়েন্ট নির্মাণ ও পর্যটকদের সুবিধার জন্য রাস্তা নির্মাণ, পানি রিজার্ভার নির্মাণ, শিক্ষা সম্প্রসারণ, কৃষি, পানীয়জল সরবরাহকরণ ও যোগাযোগ খাতকে অগ্রাধিকার প্রদান, তিন পার্বত্য জেলায় হেডম্যান কার্যালয় নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক আয়োজিত শেখ রাসেল স্মৃতি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো ব্র্যান্ডিং হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন, প্রাকৃতিক পরিবেশের বিরুপ প্রতিক্রিয়া পরিহারের জন্য বেশি পরিমাণে বৃক্ষ রোপন এবং পাথর উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
চেয়ারম্যান বলেন, প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে এবং উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন প্রকার ওভারলেপিং যেন না হয়, কোন প্রকল্পের ১ম পর্যায়ের কাজ যদি ভালোভাবে বাস্তবায়ন করা যায় ২য় পর্যায়েও যেন ভালোভাবে সমাপ্ত করা যায় এবং যে সমস্ত এলাকায় পানি সমস্যা রয়েছে সেই সব এলাকার পানি সমস্যা দূরীকরনে প্রকল্প গ্রহণ করে দ্রুত সমস্যা নিষ্পত্তি করা হবে। তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকগণ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বোর্ড পরিবারের সদস্য বিভিন্ন সময়ে বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করে মূল্যবান পরামর্শ প্রদান করে থাকেন এতে বোর্ডের কার্যক্রম আরো ত্বরান্বিত হয়। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়িত সোলার প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগী নির্বাচনের সময় উপজলো পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের সাথে সমন্বয় করলে কাজের ওভারলেপিং হবে না মর্মে পরামর্শ দেন।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ^াস বলেন, দুর্গম এলাকার শিক্ষা প্রসারণ করতে হবে। দেখা যায় দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা প্রায় ৯ কিলোমিটার পথ হেঁেট স্কুলে আসে তিনি দুটি স্কুলের কথা উল্লেখ করেন (১) শিয়াই হারুং এবং (২) বলংহামারি। এ ধরণের দুর্গম এলাকার স্কুলগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতার আহবান জানান। রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক আয়োজিত শেখ রাসেল স্মৃতি নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার প্রশংসা করে বলেন এটিকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো ব্র্যান্ডিং হিসেবে গ্রহণ করেছে। রাঙ্গামাটি সদরে পাবলিক কলেজ স্থাপন প্রকল্পটির বিষয়ে দ্রুতত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ করেন।
বান্দরবান পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, বান্দরবান সদরে অবস্থিত জেলা স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে বান্দরবানের বীর বিক্রম এর নামে নামকরণের প্রস্তাব করেন। তিনি জানান যে, হারিয়ে যাওয়া লোকজ সংস্কৃতিগুলো পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসন পক্ষ থেকে লোকজ উৎসব এর আয়োজন করা হবে এবং বান্দরবানের পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে নীলাচল স্পটে ১৬ই ডিসেম্বর এর পরবর্তী সময় হতে পর্যটন মৌসুমে প্রতি সপ্তাহে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। এক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা কামনা করেন। এই উদ্যোগকে সভায় উপস্থিত সকলেই সাধুবাদ জানান।

বোর্ড সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আলম চৌধুরী, ইফতেখার আহমেদ সদস্য প্রশাসন, মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ সদস্য বাস্তবায়ন; কাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিনিধি বিপুল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ^াস, রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, বান্দরবান পার্বত্য জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।

Back to top button