সাধারণ

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে যোগ্য ব্যক্তিকেই দেখতে চায় পার্বত্যবাসী

প্রতিনিধি॥ পার্বত্য শান্তি চুক্তি এবং ২০১৪ সালের সংশোধিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’ আইন অনুযায়ী একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকেই চেয়ারম্যান পদে মনোয়ন দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি’র পর তিন মেয়াদে দুইজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য এই বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবার প্রত্যয়ে প্রতিমন্ত্রী পদ-মর্যাদার বোর্ড চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে বীর বাহাদুর নির্বাচনী মাঠে নামলে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরাকে ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোনীত করেন। এরপর তিনি সচিব পদে অবসর নেয়ায় ১৯ মার্চ ২০১৮ তারিখে পুনরায় তিনি সচিব মর্যাদায় তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান। মার্চেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে নিবেদিত ৪৫ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’-এর চেয়ারম্যান পদে সরকার কাকে মনোয়ন দেবে; এই নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে নব বিক্রম ত্রিপুরার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ গত ১৮ মার্চ শেষ হলেও সরকার নতুন কাউকে এখন পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করেনি। অন্তবর্তীকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো: নুরুল আলম নিজামী। যিনি এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে পিআরএল-এ যাবেন।
রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে চেয়ারম্যান না করায় উন্নয়নে যেমনি জনসম্পৃক্ততা বেশি থাকছে না তেমনি জন আকাংখাও পূরণ হচ্ছে না। তাই পাহাড়ের শান্তি, উন্নয়ন, স্বার্থ নিশ্চিত ও প্রতিষ্ঠানটিকে জনবান্ধব করতে হলে পাহাড়ের মানুষকেই দায়িত্বে দেয়া সমীচিন।
বছরে কমপক্ষে দেড়শ কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড হলো দেশের অন্যতম শক্তিশালী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান। যেটি তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান এর মাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। পার্বত্য অঞ্চলের অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে আর্থসামাজিকভাবে এগিয়ে নেয়া, শিক্ষা-সংস্কৃতির বিকাশ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়েই এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছিল। উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের মতামত ব্যক্ত করছেন। প্রত্যেক জেলা এবং সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের নিজ জেলা এবং নিজ সম্প্রদায় থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগের দাবী তুলছেন। বিভিন্ন জন তাদের ফেইসবুকে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সিনিয়র যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি মো: আলম খান বলেন, ‘‘যেহেতু পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ী-বাঙ্গালী জন সংখ্যা অনুপাতে প্রায় সমান সমান সেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন সংশোধন করে একজন বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের যোগ্য ব্যক্তিকে উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যন করা হলে পার্বত্য এলাকায় সাম্প্রদায়গত ভারসাম্য রক্ষা হবে এবং পার্বত্যাঞ্চলে শান্তির সু-বাতাস আরো প্রসারিত হবে । কারন পার্বত্যাঞ্চলে রাজনৈতিক থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে বাঙ্গালী সমাজ। যেমন আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান একজন পাহাড়ী, তিন জেলার তিনজন রাজাও পাহাড়ী, তিন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পাহাড়ী। তিন জেলার তিন জন সাংসদও পাহাড়ী। তাছাড়া পার্বত্য মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও উপজাতীদের জন্য সংরক্ষিত। পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনেও বাঙ্গালীরা বৈষম্যের স্বীকার। জেলা পরিষদ আইন সংশোধন করে জন সংখ্যার সম্প্রদায়গত আনুপাতিক হারে চাকরী, ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে সমতা আনয়ন প্রয়োজন। পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন সংশোধন করে একজন বাঙ্গালী থেকে ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার দাবীও দিন দিন জোরালো হচ্ছে। আমরা আশা করি যেহেতু দীর্ঘ দিন যাবৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে উপজাতীয়রা রয়েছেন সেহেতু উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যায়ে উন্নয়ন বোর্ড আইন সংশোধন করে একজন বাঙ্গালী সম্প্রদায় থেকে উপযুক্ত একজন ব্যক্তিকে উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যন পদে নিয়োগ প্রদান করিলে পার্বত্য জেলার সকল সম্প্রদায়ের সমউন্নয়ন সাধিত হবে’’।
অপরদিকে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের বৃহৎ একটা অংশ সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে দেখতে খুবই আগ্রহী। আবার চাকমা সম্প্রদায়ের অধিকাংশ এবং আওয়ামী লীগের কিয়দংশ চাচ্ছে মিজ বাসন্তী চাকমাকে (মহিলা এমপি) উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যন পদে। তিন জেলার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আমলা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ অবস্থান থেকে উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদের জন্য জোর লবিং চালাচ্ছে বলে লোকমূখে শুনা যায়।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।

Back to top button