চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
গতকাল ০৬ মার্চ ২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নাপারটিলা এলাকায় তিনটি ইটভাটায় হামলা চালিয়েছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। বান্দরবান জেলার লামা থানাধীন এলাকা থেকে আসা এই সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা চাঁদার দাবিতে ২৫-৩০ জন শ্রমিককে নির্মমভাবে মারধর করে আহত করেছে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন মোঃ হোসেন, মোঃ হৃদয়, মোঃ রুবেল, সবুজ মিয়া এবং আরও অনেকে। জানা যায়, কিছুদিন ধরে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা এনবিএম ইটভাটার মালিক নুরুল আলম কোম্পানীকে বৈঠকের জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। সর্বশেষ গতকালও তারা একই মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন করলেও মালিক ফোনটি রিসিভ করেননি। একইভাবে, এনবিকে ইটভাটার মালিকের কাছেও মুঠোফোনে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। মালিকরা সন্ত্রাসীদের দাবির কোনো সাড়া না দেওয়ায়, ৬টি মোটরসাইকেলে করে প্রতিটিতে তিনজন করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রথমে এনবিএম ইটভাটা, পরে আইবিএম ইটভাটা এবং সর্বশেষ এনবিকে ইটভাটায় হামলা চালায়। হামলার সময় তারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং ভাটার ম্যানেজাররা পালিয়ে গেলে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকদের উপর বর্বর নির্যাতন চালায়। বৈদ্যুতিক মোটা তার দিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করে শ্রমিকদের আহত করা হয় এবং মালিকদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে কঠোর হুমকি দেওয়া হয়।
সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর অন্য শ্রমিকরা আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার খবর পেয়ে আনুমানিক রাত ৯টায় লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। একই সাথে সেনাবাহিনীর একটি টিমও দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। লোহাগাড়া থানা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে এই ঘটনাস্থল হওয়ায় তৎপরতা চালাতে কিছুটা সময় লাগে। এ ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা বলেন, এশারের আজানের পরপরই ৬টি মোটরসাইকেল নিয়ে ১৮ জনের একটি বহর ভারী অস্ত্র হাতে মুখোশ পরে ইটভাটায় হানা দেয়। ইটভাটায় তারা প্রবেশ করলে ম্যানেজার পালিয়ে যায়। ক্ষিপ্ত হয়ে ইঠভাটায় নিয়োজিত শ্রমিকদের ডেকে মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে মারধর শুরু করে। পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে অন্য শ্রমিকরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
আহত শ্রমিক হৃদয় বলেন, আমাকে বাসা থেকে ধরে অফিসের সামনে আনলে দেখি আরো কয়েকজনকে বসিয়ে রেখেছে। পরে সাবাই বসিয়ে রেখে মারধর করে ম্যানেজার ও মালিককে খোঁজে না পেয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
ঘটনার খবর পেয়ে লোহাগাড়া থানা পুলিশের ওসি মো. আরিফুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স ও সেনাবাহিনীর ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ইটভাটার মালিক নুরুল আলম কোম্পানী বলেন, পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা গত পনের দিন থেকে ফোন দিয়ে আমাকে দেখা করার কথা বলে আসছে। এছাড়া বাহাদুর কোম্পানীকে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলেছে। তাদের সাথে যোগাযোগ ও দাবীকৃত চাঁদা না দেওয়াতে আজকে ইটভাটায় এসে হামলা চালিয়েছে।
লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বলেন, ইটভাটায় দাবীকৃত চাঁদা না দেওয়ায় পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় ১৬/১৭ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর টহল টিমসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। এঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের এই ধরণের হামলা আইনশৃঙ্খলার জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তারা দ্রুত অভিযানের মাধ্যমে এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। প্রশাসনের উচিত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের অবস্থান শনাক্ত করা, তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা এবং যৌথ অভিযানের মাধ্যমে এই ধরনের অপরাধীদের নির্মূল করা। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :