সাধারণ

খাগড়াছড়ির দর্শণীয় স্থান- দৃষ্টিনন্দন মায়াবিনী লেক

দেব প্রসাদ ত্রিপুরা ঃ রূপের রানী খ্যাত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান মায়াবিনী লেক। জেলা সদর হতে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দুরত্বে এই স্বচ্ছ জলরাশির লেকের অবস্থান। ভাইবোনছড়া বাজার হতে ১ কিলোমিটারেরও কম দুরত্বে কংচাইরী পাড়ার নয়নাভিরাম এই লেকটি ভ্রমনপিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে- আয়- আয়- আয়। আয়রে তোরা আয়।

এখানে আপনার বিনোদনের জন্য প্রস্তুত রাখা আছে- কিডস জোন, সিল্ক প্যাড, সাইক্লিং, জেট বুট, দেশী খেয়া নৌকা, কায়াকিং বোট, প্যাডেল বোটসহ নানা ধরনের রাইডের ব্যবস্থা। ময়ূরপঙ্খী নৌকায় চড়ে মনের অজান্তেই গেয়ে উঠবেন- আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে, ভাইবোনছড়ার মায়াবিনীর পাড়ে, ময়ুর পঙ্খী ভিড়িয়ে সেথা দেখে এলেম তারে। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাতায়াতের জন্য বানানো হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের সাঁকো। বাঙ্গালীর বরশি দিয়ে মাছ শিকারের শখ চিরন্তন। এটিই বা হাতছাড়া করবেন কেন। তার সুযোগও রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ভালমানের রেস্টুরেন্ট, কফি হাউস। গ্রুপ পিকনিক করতে চাইলেও সার্বিক সহযোগীতা করে থাকেন কর্তৃপক্ষ।


শীতল পানির লেকের ধারে বসে নীল আকাশের সাদা মেঘে মনকে ভাসানোর সুযোগ রয়েছে প্রেমপিপাসুদের। এখানে দুষ্টু বানরের দল আপনাকে দুষ্টুমিতে মাতিয়ে রাখবে। নিষ্কলুষ মানুষ লেকের স্বচ্ছ পানিতে দৃষ্টি দিলে দেখা মিলবে পাহাড়ী চিংড়ি মাছের প্রেমলীলা। নানান প্রজাতির মাছের আনাগোনাতো রয়েছেই। এছাড়াও দেখা মিলবে সাদা বকের দল আর পানকৌড়িদের লুকোচুরি খেলা। বুনো হাঁসের ঝুটি যখন হঠাৎ উঁকি দিয়ে যাবে পাশের জলে, হারিয়ে যাবেন নিজে-ক্ষনিকের তরে। মনে হবে, আমার প্রেমস্বত্বাকে উপহাস করছে নাতো ঐ হংসযুগল ? পশ্চিমাকাশে গৌধূলির সুর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্যও আপনি দেখতে পাবেন মায়াবিনীতে।
মায়াবিনীর এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বিকেল-সন্ধ্যা গড়িয়ে নামবে রাত্রি। আপনার অবচেতন মন পড়ে থাকতে চাইবে এখানেই। এজন্য ক্যাম্পিং করে রাত্রিযাপনের সুযোগও করে দিবে কর্তৃপক্ষ।


২০১৭ ইং সালে স্থানীয় কয়েকজন উৎসাহী যুবক পাহাড়-টিলা আর জলাভূমি মিলিয়ে ৪০ একর জমি লীজ নিয়ে মাছ চাষের উদ্যোগ নেন। নিচুজমিতে বাঁধ দিয়ে মাছচাষ এবং পাহাড়-টিলায় বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপন শুরু করেন। এলাকার লোকজন এই কর্মকান্ডগুলো দেখতে আসেন। কিছুদিনের মধ্যে এলাকার গন্ডি ছাড়িয়ে এই লেকের নান্দনিক মহিমা ছড়িয়ে পড়ে সারা জেলায়-সময়ের স্রোতে দেশ-দেশান্তরে। বিদ্যুৎসাহী যুবকরা যুক্ত করতে থাকে পর্যটকদের নানান সুযোগ সুবিধা। পর্যটক সহায়ক নানান উপকরণ। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি মায়াবিনীকে। পর্যটকদের মাস্ক পড়া, হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্ব্স্থ্যাবিধি পালন নিশ্চিত করা হচ্ছে। তাছাড়া পর্যটকদের আরো উন্নতমানের সেবা দিতে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানালেন উদ্যোক্তা এবং মায়াবিনী পরিচালনা কমিটির সভাপতি অংহলা মারমা।
দীর্ঘ সময় করোনার ভয়াবহতা কাটিয়ে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সব বয়সের পর্যটকের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠছে মায়াবিনী। টিকেট কাউন্টারের সামনে মানুষের দীর্ঘ সারি জানান দেয় পর্যটক বাড়ছেই। চাঁদের গাড়ী, মাহিন্দ্রা, সিএনজি, মোটরসাইকেল, ব্যাটারীচালিত টমটম অথবা যে কোন যানবাহনে চড়ে জেলা শহর থেকে সহজেই আসা যায় মায়াবিনীতে।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।

Back to top button