সাধারণ

খাগড়াছড়িতে ইটভাটায় পুড়ছে সরকারী রাবার গাছ. দেখেও না দেখার নাটক করছে কর্তৃপক্ষ

(ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ১ম পর্ব)

 

 

সবুজ পাতা ডেস্ক : পার্বত্যাঞ্চলের অনুমোদনবিহীন অবৈধ ইটভাটায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান কাঠ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহারের ফলে বৃক্ষ শূন্য হচ্ছে পাহাড়। বন বিভাগ এবং কাঠ ব্যবসায়ীদের যোগসাজসে আইনের ফাঁক ফোকরে বৈধ-অবৈধভাবে বন ধ্বংসের তান্ডব তো চলছেই। পার্বত্যাঞ্চলের অধিকাংশ রিজার্ভ ফরেস্ট এখন বৃক্ষশূন্য। এবার ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে যুক্ত হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন সরকারী রাবার গাছ। খাগড়াছড়ির কোন ইটভাটার বৈধ কাগজ পত্র নেই। নিয়ম নীতি ছাড়াই যত্রতত্র স্থাাপন করছে ইটভাটা। জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বনের মূল্যবান কাঠ। দেখেও না দেখার নাটক করছে কর্তৃপক্ষ।
৩ মার্চ বুধবার সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলাধীন কাটারুং মৌজার ১ নং যৌথ খামার কড়ইতলী এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সৃজিত সরকারী রাবার বাগানের রাবার গাছ কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রায় ১৫ একর জায়গার গাছ কর্তন করা হয়েছে। আরো গাছ কাটার প্রক্রিয়া চলছে। সেসব গাছের মোথা বা গোড়া থেকে তখনো রাবার কষ বের হচ্ছে। ৪জন শ্রমিক গাছ কাটায় ব্যাস্ত থাকলেও তারা নিজেদের নাম পরিচয় দিতে রাজি হয়নি। শ্রমিকরা জানান, ‘আমরা দৈনিক ৪০০টাকা মজুরীতে কাজ করছি। কাজ করাচ্ছেন শাক্ক্য চাকমা’। শ্রমিকদের নিকট থেকে শাক্ক্য চাকমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে তাঁকে ফোন দেওয়া হয়। রাবার গাছ কেটে ইটভাটায় বিক্রয়ের কথা স্বীকার করেন শাক্ক্য চাকমা। প্রতি গাড়ি কত টাকায় বিক্রয় করা হচ্ছে জানতে চাইলে শাক্ক্য চাকমা ফোন কেটে দেন। মূহুর্তেই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। তখন রাবার বাগান ব্যবস্থাপনা ইউনিটের দিঘীনালার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবাস কুসুম চাকমা জানিয়েছিলেন, ‘কাটারুং মৌজার কড়ইতলী এলাকায় কোন ব্যক্তিগত রাবার বাগান নেই। সব উন্নয়ন বোর্ডের রাবার গাছ। গাছ কাটার বিষয়টি আমি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো’।
৭ মার্চ রাবার বাগান ব্যবস্থাপনা ইউনিট খাগড়াছড়ি কার্যালয়ে গিয়ে রাবার উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন কষ আহরনযোগ্য রাবার গাছ কেটে ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহারের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের অনুমোদনকৃত কিনা ? এবিষয়ে জানতে চাইলে নাম পদবী প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন জন কর্মকর্তা জানান, ‘‘ সুবাস কুসুম চাকমাকে আমরা সেখানে পাঠিয়েছিলাম। সত্যতা পেয়ে রাবার গাছ কাটার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করছি। ঐ দিনেই অবৈধভাবে কর্তনকৃত দুই গাড়ি রাবার গাছ আমরা দিঘীনালা থানায় সোপর্দ করেছিলাম কিন্তু জানিনা কিভাবে চুরাইচক্রটি উক্ত গাছ থানা থেকে ছাড়িয়া নিয়ে গেল’’। এ বিষয়ে দিঘীনালা থানার ওসি উত্তম চন্দ্র দেব বলেন, ‘আমরা কোন রাবার গাছ জব্দ করি নাই। উন্নয়ন বোর্ড আপনাদের কাছে কেন যায়? আমাদের কাছে আসলেই তো হয়’’। দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন কর্মকর্তা আরো জানান, এগুলো ৩০-৩৫ বছরের পুরানো গাছ। তেমন কষ আহরন হয় না। তবুও অনুমোদন ছাড়া গাছ কাটা নিষেধ। এখানে ৫০টি পরিবারের জন্য ২০০ একর জায়গায় রাবার গাছ সৃজন করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বা দেশীয় বাজারে রাবারের দাম কমে যাওয়ায় এবং বিভিন্ন কারনে রাবার প্রকল্পটি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। অর্থাভাবে কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রায় ৩০ মাস যাবৎ বেতন পাচ্ছে না। পূর্বে অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী কোটি কোটি টাকার রাবার চুরি করে বিক্রি করেছে। তদন্তে প্রমাণিতও হয়েছে তদোপরি দোষি কর্মকর্তারাই প্রমোশন পেয়েছে। সরকার যদি সদয় দৃষ্টিতে আমাদের বিষয়টি দেখতো এবং বিকল্প একটা প্রজেক্ট দিয়ে আমাদের কর্মসংস্থাানের সুযোগ করে দেয় তাহলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকমে দিন কাটাতে পারতাম’’। চলমান…..

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।

Back to top button