সাধারণ

কারফিউ, তল্লাশিতে অতিষ্ট কাশ্মীরবাসী

 

সবুজ পাতা ডেস্ক : অন্যায় দমন-পীড়নে বিদ্রোহী হয়ে উঠছে কাশ্মীরের বাসিন্দারা। যখন-তখন কারফিউ, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি আর নিরাপত্তা অভিযানের নামে নাগরিক হয়রানি সর্বক্ষণ। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সমাবেশে নিষেধাজ্ঞার তো আছেই।

অহিংস আন্দোলনে প্যালেট গান আর ছররা গুলি ছোড়ে নিরাপত্তা বাহিনী। বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের পুলওয়ামা শহরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলার পরও একই চিত্র।

এ হামলায় ৪৬ জন জোয়ান নিহত হয়েছেন। এর দায় চাপছে নিরপরাধ কাশ্মীরিদের ওপর। শুক্রবার আবারও কাশ্মীরে কারফিউ জারি করেছে ভারত।

স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পুরনো এ চিত্রই দেখে আসছে কাশ্মীরিরা। কিন্তু তাদের কথা কেউ শোনে না। তাদের কষ্ট কেউ বোঝে না। শুক্রবার ভারতের দ্য প্রিন্ট জানায়, আর বুলেট নয়, তারা কাশ্মীরের আজাদ (স্বাধীনতা) চায়।

১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার এ অঞ্চলটিতে ৭০ শতাংশ মুসলমানের বাস। কাশ্মীরের জনগণের একটি বড় অংশ স্বাধীনতা চায়। অথচ ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীর দখল করে রেখেছে।

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ওই এলাকায় স্বাধীনতার পক্ষে ভোটাভুটি করার প্রস্তাব দিলেও তাতে ভারত সায় দেয়নি। কাশ্মীর স্বাধীনতার প্রশ্নে আশির দশক থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছে তরুণ-যুবকরা।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া’ যুবারা এখন অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে। লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৮৯ সাল থেকে মুসলিম স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করে ভারত। প্রতিদিনই দু-চারজন যুবক হত্যার শিকার হচ্ছেন। বিক্ষোভ রুখতে ২০১০ সাল থেকে পেলেট গান (ছররা গুলি) নামক এক ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করছে নিরাপত্তা বাহিনী।

শুধু কাশ্মীরেই এই পেলেট গান ব্যবহার করে ভারত। বন্দুকের গুলির মতো মারণাস্ত্র নয় এ ছররা। একেকটি শেলের মধ্যে ছোট ছোট পাঁচ শতাধিক লোহার বল থাকে। ২০১১ সালে অনন্তনাগে ১৪ বছরের এক বালক পেলেট গানের আঘাতে আহত হয়।

ভারতের নিপীড়নের শিকার স্বাধীনতার চেতনাকে আঁকড়ে ধরা এ শিশু হাসপাতালের বেডে কাতরাতে কাতরাতে বলেছিল, ‘সেনাদের গুলিতে মরতে চেয়েছিলাম আমি। আমার শাহাদাত কাশ্মীরিকে আজাদি এনে দেবে।

আজাদি না দেখে যেতে পারলেও কোন আফসোস নেই। কারণ এতে অন্তত এ জীবন্ত কারাগার থেকে মুক্ত হতে পারব।’

২০১৮ সালে ভারতীয় বাহিনীর হামলায় অন্তত ৪১৩ জন নিহত হয়েছেন। গুলিতে বহু কাশ্মীরি শিশু-তরুণ-যুবক চোখ হারিয়েছেন। কাশ্মীর সরকারের এক তথ্যানুসারে, ২০১৭ সালে আট শতাধিক কাশ্মীরি চোখে আহত হয়েছিলেন।

তবে পেলেট ভিকটিম ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মতে, ২০১৭ সালে ১২০০-এর বেশি নারী, পুরুষ ও শিশুর চোখে ছররার গুলি লেগেছে। এর মধ্যে শতাধিক কাশ্মীরির এক বা উভয় চোখ অন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালকে তো ‘গণ-অন্ধত্ব সাল’ বলে অভিহিত করা হয়।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।

Back to top button