সাধারণ

আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারি বা হাইব্রিডদের নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে

সবুজ পাতা ডেস্ক : সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজিতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহানকে হত্যার ঘটনার সন্দেহভাজন কয়েকজনের সাথে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা থাকায় বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারিদের তালিকা তৈরি করে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ তথ্য জানিয়েছেন দলের একজন শীর্ষ নেতা ।
নুসরাত জাহাত হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তারকৃত সোনাগাজি পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাকসুদ আলমকে সোমবার পাঁচদিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
পুলিশ বলেছে, প্রধান অভিযুক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আগে জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও হালে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেছিলেন। আওয়ামী লীগের তৃণমুলের নেতা কর্মীদের অনেকে বলেছেন, ক্ষমতার সুবিধা নিতে বিভিন্ন দল থেকে যোগদানকারির সংখ্যা উদ্বেজনক হারে বাড়ছে।
সোনাগাজিতে মাদ্রাসা ছাত্রীকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ১৩ জনের মধ্যে মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা সহ ১০জনকে ইতিমধ্যেই রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
সোনাগাজি আওয়ামী লীগের একজন নেত্রী মর্জিনা আকতার বলেন, সাবেক জামায়াত নেতা সিরাজউদ্দৌলা স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু’এক জনের সাথে যোগসাজশ করে চলতো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আওয়ামী লীগকেই অস্বস্তিতে ফেলেছে”।

যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা সোনাগাজির হত্যারকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের কাউকে ছাড় না দিয়ে তাদের অপরাধী হিসেবে দেখার কথা বলছেন।

কিন্তু সোনাগাজির ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারিদের নিয়ে দলটির নেতা কর্মিদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের একজন নেত্রী জিনাত সোহানা চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু টানা সরকারে রয়েছে, সেজন্য সুবিধা নিতে বিভিন্ন দল থেকে লোকজন ভিড় করছে তাদের দলে।এই নব্যদের অনেকের নানান অপরাধের কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।

“আওয়ামী লীগ যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছে, এখানে হাইব্রিডদের অনুপ্রবেশ আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। কারণ দেখা যাচ্ছে, অনেকে আওয়ামী লীগের বদনাম করার জন্য, অনেকে আছে চেহারাটা পাল্টিয়ে নব্য আওয়ামী লীগার হয়ে বিভিন্ন কাজ করে আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলছে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি করে যাচ্ছে, তারা অনেক সময় হাইব্রিডদের কারণে অবহেলিত হয়।”

গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দল থেকে যারা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন, তাদের নিয়ে অনুপ্রবেশকারি বা হাইব্রিড- এই শব্দগুলো দলটিতে বেশ আলোচিত হচ্ছে। সিনিয়র নেতারাও বিভিন্ন সময় এনিয়ে জনসমক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

অনেক জায়গায় নব্যদের সাথে পুরোনো নেতা কর্মিদের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে বলেও অনেকে বলেছেন। রাজশাহী থেকে আওয়ামী লীগের একজন নেত্রী পূর্ণিমা ভট্টাচার্য বলছিলেন, পরিস্থিতির কারণে তৃণমুলে তাদের মাঝে অনেক সময় হতাশাও তৈরি করছে।

“অনুপ্রবেশকারি বা হাইব্রিড নামে যে কথাটা প্রচলিত হয়েছে বা তারা যে আসছে,এরা এসে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং অনেক ক্ষতি করছে। আমরা যারা দীর্ঘ সময় ধরে দল করি, তারা প্রতি পদে পদে এটা অনুভব করছি।”

তবে বছর খানেক আগে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে যুদ্ধাপরাধী কেউ বা জামায়াতে ইসলামীর কেউ যেনো তাদের দলে যোগ দিতে না পারে।

এছাড়া অন্য দলগুলোর কেউ আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চাইলে তার অতীত যাচাই করে দেখার নির্দেশ ছিল নেতা কর্মিদের প্রতি। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকেই এই নির্দেশ ছিল।

কিন্তু এর বাস্তবায়ন হয়নি বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই।

আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফও বলেন, “আমরা দূর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ্য করেছি যে, বিভিন্ন সময় বিশেষ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দল থেকে এসে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বা বিদ্রোহী প্রার্থীর সাথে ভিড়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পর ইতিমধ্যে সারাদেশে এই তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। কোথায় কে কোন দল থেকে যোগদান করলো। তা যাচাই বাছাই করার জন্য একটি কমিটি করা হয়”।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।

Back to top button