অশান্ত মহেশখালীতে শান্তির হিমেল হাওয়া ৪৩ জলদস্যুর আত্নসমর্পণ

হারুনর রশিদ,মহেশখালী : কক্্রবাজার জেলার মহেশখালী – কুতুবদিয়া অঞ্চলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ১২ জন জলদস্যুসহ ৬টি জলদস্যু বাহিনীর মোট ৪৩জন সক্রিয় সদস্য ৯৪টি অস্ত্র ও ৭৬৩৭ রাউন্ড গোলাবারুদসহ র্যাবের নিকট আত্নসমর্পণ করেছে । ২০ অক্টোবর সকাল ১১টার সময় মহেশখালী উপজেলার মহেশখালী আর্দশ উ”চ বিদ্যালয়ের মাঠে লে:কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ (বিপিএম বার),(বিপিএম সেবা) এর সভাপতিত্বে সন্ত্রাসী ও জলদস্যুদের আত্নসমর্পণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এম.পি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন (ককসবাজার-২ মহেশখালী- কুতুবদিয়া আসনের সাংসদ আলহাজ আশেক উল্লাহ রফিক, সদর-রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমদ বিপিএম বার, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড.সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন, চট্রগ্রাম রেঞ্জ এর ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, উপজেলার পুজাউদযাপন কমিটির সভাপতি মাস্টার ব্রজগোপাল, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক মাস্টার রুহুল আমিন, এড.আবু তালেব, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ফরিদুল আলম, উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের নেত্রী ও জেলা পরিষদের সদস্য মোশারফা বেগম। উপস্থিাত ছিলেন র্যাব৭ এর কমান্ডার, জেলা পুলিশ সুপার, কোস্টগার্ডের কমান্ডারসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। তাছাড়া স্থাানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিাত ছিলেন।
আত্নসমর্পণ করা ৬ জলদস্যুবাহিনীর প্রধানরা হলেন-আনজু বাহিনী, রমিজ বাহিনী, নুরুল আলম প্র:কালাবদা বাহিনী, জালাল বাহিনী, আইয়ুব বাহিনী, আলা উদ্দিন বাহিনী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত কুখ্যাত জলদস্যু মহেশখালীর সোনাদিয়ার আনজু বাহিনী তার ১০ সদস্য, ২৪টি অস্ত্র, ৩৪৫ রাউন্ড গোলাবারুদ নিয়ে আর্তসমর্পণ করেছে। আনজু বাহিনী ও তার সদস্যরা হলেন-আনজু মিয়া,সুমন মিয়া,মকছুদ মিয়া,মোনাফ মিয়া,মোবারক,মনজুর মিয়া,নুরুল মোস্তফা,ছৈয়দ হোসেন, নবাব মিয়া, ইমতিয়াছ উদ্দিন নবি। তারা সাগরে ১০/১৫ বছর যাবৎ জলদস্যুতার কাজ করত। তাদের ভয়ে জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যেতে সাহস পাইত না। অবশেষে আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে তারা আত্নসমর্পণ করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত কুখ্যাত জলদস্যু কুতুবদিয়ার রমিছ বাহিনীর ২ সদস্য, ৮টি অস্ত্র, ১২০ রাউন্ড গোলাবারুদসহ আত্নসমর্পণ করেছে। রমিছ বাহিনী ও তার ১ সদস্য ছালেহ আহমদ। তারা গভীর সাগরে জেলেদের ফিশিং বোট থেকে মাছ ও জাল লুটকরে উপকুলে বিক্রি করত। দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ সাগরে দস্যুতার কাজ করে আসছিল।
মহেশখালী উপজেলার কালামারছড়া ইউনিয়নের কুখ্যাত নুরুল আলম প্র:কালাবদা বাহিনী ৬সদস্য, ২৩টি অস্ত্র, ৩৩৩রাউন্ড গোলাবারুদ নিয়ে কালাবদা ও তার বাহিনীর ৬সদস্য কালাবদা,রশিদ মিয়া, মোহাম্মদ আলী, আলমগীর প্র:টুনু,আবু জাফর,মো: জালাল উদ্দিন। তারা চিংড়িঘের, পানের বরজ এবং সড়কপথে ডাকাতি করত।
জালাল বাহিনী ১৫ সদস্য, ২৯টি অস্ত্র, ৬৭৯৮ টি গোলাবারুদসহ আত্নসমর্পণ করেছে। তার বাহিনীর সদস্যরা হলেন ইসমাইল, মোস্তফা কামাল পারভেজ, ওসমান, আহমদ ,জামান, নুরুল আমিন, আবু তাহের, আব্দুল মন্নান, মন্নান, রাশেদ,লোকমান, জয়নাল আবেদীন, মো:শহিদুল্লাহ, বাদল, মাহাবুব আলম, আতা উল্লাহ। জালাল বাহিনী বিগত ১০ বছর ধরে মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজীপাড়ার বি¯ৃÍর্ণ চিংডির চাষ, পানের বরজ,লবণ মাঠ,ধানের জমি দখল সহ বিভিন্ন রকমের অপরাধ মূলক কাজ করত। এই অন্ধকার জগৎকে ধিক্কার জানিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আত্নসমর্পণ করেছে তারা।
মহেশখালীর কুখ্যাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী আইয়ুব বাহিনী ৯সদস্য ,৯টি অস্ত্র, ৩৭ রাউন্ড গোলাবারুদসহ আত্নসমর্পণ করেছে। আইয়ুব বাহিনীর সদস্যরা হলেন আব্দুল মান্নান, মো:জসিম, মো: রবিউল আলম, মো: রুবেল, মো:আবু তাহের, মো: আনোয়ার, মো:আনোয়ার পাশা, মো:ইউনুছ, মো: কামাল। এলাকায় আদিপত্য বিস্তার করতো এবং সড়ক পথে ডাকাতিসহ পানের বরজ,পাহাড়ের গাছ লুটকরা ছিল তাদের কাজ। অবশেষে তারা আত্নসমর্পণ করায় এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে।
মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের আলাউদ্দিন বাহিনী নিজেই ১টি বন্দুক ৪রাউন্ড গোলাবারুদ নিয়ে আর্তসমর্পণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে সে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্টির নিকট তার বাহিনী নিয়ে ভাড়া যেত এবং বিভিন্ন রকমের অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল ।
উপজেলার ৪৩জন জলদস্যু অস্ত্র গোলাবারুদ সহ আত্নসমর্পণ করায় অশান্ত মহেশখালীর পাহাড়ে এবং উপকুলে শান্তির পরিবেশ বিরাজ করবে।